সূর্যকান্ত মিশ্র।— ফাইল চিত্র।
রাজ্য কমিটির একের পর এক বৈঠকে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, রাস্তায় নেমে আন্দোলন এবং কর্মসূচিতেই থেমে থাকলে চলবে না। ভোটের সময়ে বুথ কমিটি গড়ে ভোটকেন্দ্র আগলাতে হবে, মানুষকে ভরসা দিতে হবে ভোট দিতে বেরোনোর। তবু পরের পর ভোটে দেখা গিয়েছে সেই একই চিত্র! বুথ কমিটি বেশির ভাগ জায়গাতেই হয়নি। বুথ আগলে পড়ে আছেন নামমাত্র এজেন্ট। সাংগঠনিক কমিটির কাজে দলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশের শিথিলতার জন্য এ বার পুজোর কলমে তাঁদের হুঁশিয়ারি দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে লোক থাকলেও তৃণমূল স্তরে গিয়ে কাজ করার সময় লোক পাওয়া যাচ্ছে না, রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরে সিপিএমে এই ছবি দেখা যাচ্ছে বিস্তর। এমনকি, নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজেও প্রভাব ফেলেছে এই সমস্যা। দলের বৈঠকে অজস্র বার এই প্রবণতা কাটানোর জন্য সরব হয়েছেন সূর্যবাবু। এ বার দলের পরিচালনাধীন একটি পত্রিকার শরৎ সংখ্যায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের লেখার বিষয়বস্তু ‘পার্টি কমিটি পরিচালনা প্রসঙ্গে’। সংগঠনের কাজ চালানো সম্পর্কে ভি আই লেনিন, মাও জে দং বা জর্জি দিমিত্রভ কী বলেছিলেন, সেই সব নিদান উল্লেখে করতে গিয়েই কৌশলে বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের কর্মীদের সতর্ক করেছেন সূর্যবাবু।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের কথায়, ‘কমরেডগণ, লোক নেই! আমাদের পার্টি নেতারা প্রায়ই এই অভিযোগ করে থাকেন। তাঁরা বলেন, প্রচার ও আন্দোলনের কাজের লোকের অভাব, সংবাদপত্র ও ট্রেড ইউনিয়নের কাজ চালানোর লোক নেই, যুবক ও মেয়েদের মধ্যে কাজ করারও যথেষ্ট লোক পাওয়া যায় না। যথেষ্ট নয়, যথেষ্ট নয়— এই হল তাঁদের ধুয়া’!
যথেষ্ট ও যোগ্য কর্মীর অভাবে সংগঠনের কাজ আটকে যাচ্ছে, এই ‘ধুয়া’কে সূর্যবাবু নস্যাৎ করেছেন লেনিনের ‘পুরনো অথচ চিরনতুন কথা’তেই। লেনিনকে উদ্ধৃত করে তাঁর জবাব, ‘লোক নেই, তবু অসংখ্য লোক আছে। অসংখ্য লোক আছে এই কারণে যে, শ্রমিক শ্রেণি ও সমাজের নানা স্তর থেকে বছরের পর বছর ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বিক্ষুব্ধ মানুষের উদ্ভব হচ্ছে। এঁরা প্রতিবাদ জানাতে ইচ্ছুক। এঁরা প্রস্তুত স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সর্বরকম সাহায্য করতে’। জনতার মধ্যে থেকেই লোক খুঁজে নেওয়ার পরিশ্রম কর্মীদের করতে হবে, বোঝাতে চেয়েছেন সূর্যবাবু। মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘নির্দিষ্ট পরিস্থিতির নির্দিষ্ট বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বর্তমানে তার প্রয়োগের দায়িত্ব বর্তমান প্রজন্মের কমিউনিস্টদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। এ কাজ কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়’।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে আতঙ্কের আবহে ভোটার তথ্য যাচাই এবং রেশন কার্ডের আবেদনের জন্য এলাকায় এলাকায় সহায়তা শিবির খোলার নির্দেশ দিয়েছে সিপিএম। যেখানে শিবির হয়েছে, সেখানে সাড়া মিলছে ভালই। কিন্তু কত দূর শিবির খোলা গিয়েছে, তা যাচাই করা হবে আগামী ১৭-১৮ অক্টোবর দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে। ‘লোক নেই’ যুক্তি সেখানেও উঠলে রাজ্য সম্পাদক কী বলেন, সে দিকে নজর থাকবে বাম মহলের!