থমথমে: মৃত্যুর খবর আসার পরে অনির্বাণের (ইনসেটে) বাড়িতে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার, বরাহনগরে। নিজস্ব চিত্র
বাবা-মা জানতেন, ছেলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। মঙ্গলবার থেকেই পরীক্ষা শুরুর কথা। সোমবার রাতে হাওড়া শাখার বালি স্টেশনের কাছ থেকে বরাহনগরের বাসিন্দা ওই ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়। জানা যায়, অনির্বাণ নন্দী (১৮) নামে ওই ছাত্র গত এক বছর ধরে স্কুলেই যায়নি। অথচ নিয়মিত স্কুলের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বেরোত সে। বাড়ির লোকেরাও
জানতেন ছেলে স্কুলেই যাচ্ছে।
সোমবার রাত হয়ে গেলেও ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে চিন্তায় পড়েছিলেন বাবা-মা। চার দিকে খোঁজ করার মাঝেই স্থানীয় থানা থেকে খবর এল, বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রেললাইনে উদ্ধার হয়েছে ওই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর দেহ। রেলপুলিশের অনুমান, নিয়ম ভেঙে রেললাইন পারাপার করতে গিয়েই ট্রেনের ধাক্কায় ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রেলপুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে হাওড়ামুখী বর্ধমান লোকাল বালি স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে কিছুটা এগোতেই ওই ছাত্রের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তাতে বালিহল্ট সেতু পার করে প্রায় ২০০ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে অনির্বাণের দেহ। ঘটনার পরে লোকাল ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে বেলুড় জিআরপি-র কর্মীরা দেহটি তুলে নেওয়ার পরে ফের ছাড়ে ট্রেন। লোকাল ট্রেনের গার্ড যে মেমো বালি স্টেশনে জমা দিয়েছেন, তা থেকে এটা স্পষ্ট, যেখানে ধাক্কা লেগেছিল সেখান দিয়েই যাত্রীরা বেআইনি ভাবে লাইন পার করে বালি স্টেশনের শেষ প্রান্তে গিয়ে বালিহল্ট সেতুতে ওঠেন।
যদিও অনির্বাণের বন্ধু ও পরিজনদের কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে। যেমন, রাত ১১টা নাগাদ অনির্বাণ কেন বালি স্টেশনে গিয়েছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের দেওয়ালে কোনও এক রেললাইনের পাশে তার দাঁড়ানো পুরনো ছবি দিয়ে ওই ছাত্র লিখেছিল, ‘বাই’! কেন? এমনকী, ওই রাতে হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ থেকে অনির্বাণের বেরিয়ে যাওয়া নিয়েও বন্ধুদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
গোপাললাল ঠাকুর রোডের বাসিন্দা অমরনাথ নন্দীর ছোট ছেলে অনির্বাণ। ডানলপের জ্যোতিনগর বিদ্যাশ্রী নিকেতনের বাণিজ্য শাখার ছাত্র। যদিও প্রধান শিক্ষক গৌতম দে বলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে পড়ত সে। দ্বাদশ শ্রেণিতে ভর্তিই হয়নি। সম্ভবত অনির্বাণ পাশ করতে পারেনি।’’
পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রের পকেটে পাওয়া আধার কার্ড দেখে বরাহনগর থানায় খবর দেওয়া হয়। সেখান থেকেই অনির্বাণের পরিজনেরা দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন। মঙ্গলবার বেলুড় জিআরপি থানায় বসে অমরনাথবাবু বলেন, ‘‘মাঝেমধ্যে রাতে রিষড়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে যেত বলে শুনেছি। কিন্তু ওই দিন কোথায় গিয়েছিল, কী ভাবে এমন ঘটল, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ অমরনাথবাবু জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ বাড়িতে মোবাইল চার্জে বসিয়ে বেরিয়েছিল ছেলে।
ওই ছাত্রের এক বন্ধু শৌভিক দত্ত বলে, ‘‘রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ দেখা হতে বলেছিল, ‘বাড়ির রুটি আনতে যাচ্ছি।’ এর পরে আর দেখা হয়নি।’’ মঙ্গলবার ওই ছাত্রের দাদা অরিন্দম বলেন, ‘‘পাড়ার ক্লাবে ক্যারম খেলতে যাচ্ছি বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ভাই। ইদানীং পড়াশোনা নিয়ে বাবা-মা ওকে বকাবকিও করতেন।’’