প্রতীকী ছবি।
মৃত্যু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। অথচ দায় ঠেলাঠেলিতে এক সপ্তাহ ধরে করোনায় মৃত এক ব্যক্তির সৎকারের বন্দোবস্তটুকু করা গেল না।
পূর্ব মেদিনীপুরের এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের মর্গেই পড়ে রয়েছে বছর এক চল্লিশের ওই ব্যক্তির দেহ। পরিবার, না হাসপাতাল, না প্রশাসন— কে সৎকার করবে তা নিয়েই চলছে জটিলতা।
এগরা-২ ব্লকের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি গত ৬ অগস্ট জ্বর নিয়ে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি কলকাতার যাদবপুরে মিষ্টির দোকানে কাজ করতেন। ৬ অগস্টই তাঁর করোনা পরীক্ষা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে এবং রাতেই তিনি মারা যান। এলাকাবাসীর চাপে তাঁর দেহ বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি হননি পরিজনেরা। সমস্যার সূত্রপাত তখনই।
তার পর গত রবিবার দেহ সৎকারের জন্য জ্বালানি কাঠ নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে ফিরে আসেন মৃতের পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদেরকেই অন্ত্যেষ্টির কাজ করতে বলেছেন। মৃতের এক ভাইপোর কথায়, ‘‘প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে এক সপ্তাহ ধরে মৃতদেহ মর্গে ফেলে রাখা হয়েছে। মৃত্যুর শংসাপত্র পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকারে যদি প্রশাসন ব্যর্থ হয়, তা হলে করোনা-কালে আরও অনেক খারাপ পরিস্থিত অপেক্ষা করছে।’’
এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার রঞ্জন রায়ের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘পরিবার চাইলে মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে যেতে পারে। দেহ সৎকারের সঙ্গে ওই শংসাপত্রের কোনও যোগ নেই।’’ কিন্তু দেহ সৎকার করা যাচ্ছে না কেন? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকারের উপযুক্ত ব্যবস্থা তাঁদের নেই। ঠিক একই যুক্তি দেখিয়ে এগিয়ে আসেনি পুরসভাও।
সপ্তাহখানেক আগেই স্থানীয়দের বাধায় জেলারই কোলাঘাটে এক করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকারে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। শেষে ব্লক প্রশাসনের তরফে সর্বদল বৈঠক ডেকে সমস্যার সমাধান হয়। এর আগেও এগরা মহকুমায় করোনায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের নজরদারিতে বাড়ির লোকই সৎকার করায় পরিস্থিতি জটিল হয়নি।
কিন্তু এত দিনে পরিকাঠামো গড়া গেল না? এগরার মহকুমাশাসক অপ্রতিম ঘোষের জবাব, ‘‘এলাকার মানুষের প্রতিরোধের জন্যই দেহ সৎকার করা যাচ্ছে না। জেলা পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’’ যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলছেন, ‘‘ওই দেহ সৎকারের বিষয়টি মহকুমাশাসক দেখছেন।’’