Uttarakhand Disaster

Uttarakhand Disaster: ‘এত নিষেধ করলাম তবু শুনল না’, তনুময়দের বাড়িতে এখন শুধুই হাহাকার

একমাত্র ছেলেকে পুজোর সময় ট্রেকিংয়ে যেতে পইপই করে নিষেধ করেছিলেন মা শমিতা তিওয়ারি। কিন্তু নিষেধ শোনেনি ছেলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দেহরাদূন শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২১ ০৪:৪৫
Share:

তনুময় তিওয়ারি।

মাসখানেক পরেই বিয়ের কথা ছিল বারুইপুরের বাসিন্দা রিচার্ড মণ্ডলের (২৮)। তার আগেই হিমালয়ের কোলে মৃত্যু হল তাঁর। বন্ধুদের সঙ্গে লামখাগা পাসে ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন তিনি। দুর্যোগের পর থেকে নিখোঁজই ছিলেন। শনিবার হিমাচল প্রদেশের সাংলা থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। রিচার্ডের পরিবার জানিয়েছে, বিকেলে ভিডিয়ো কল মারফত দেহ চিহ্নিত করেছেন তাঁরা।

Advertisement

হাহাকার হরিদেবপুরের কবরডাঙায় তনুময় তিওয়ারির (৩০) বাড়িতেও। একমাত্র ছেলেকে পুজোর সময় ট্রেকিংয়ে যেতে পইপই করে নিষেধ করেছিলেন মা শমিতা তিওয়ারি। কিন্তু নিষেধ শোনেনি ছেলে। এখনও নিখোঁজ তনুময়ের মামা সুখেন মাঝি। পুত্রশোকে আকুল শমিতা এখনও স্মার্ট ফোনে ছেলের সঙ্গে শেষ হোয়্যাটসঅ্যাপ কথোপকথন দেখে চলেছেন। নবমীর দিন তনুময় লিখেছিলেন, ‘চিন্তা কোরো না। ফোনের স্ক্রিনে সেই কথা দেখতে দেখতে ‘তনু’র মা বলে চলেছেন, ‘‘এত নিষেধ করলাম। তবু শুনল না।’’

সপ্তমীর আলো ফোটার আগেই বেরিয়ে পড়েছিলেন তনুময়, রিচার্ড, সুখেনদের দল। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল, ট্রেকিং শেষ করে ২৩ অক্টোবর (এ দিন) শিমলায় থাকবেন। সব ঠিক থাকলে আগামিকাল, সোমবার কলকাতায় ফিরতেন এই তরুণের দল।

Advertisement

বারুইপুর কল্যাণপুরের বাসিন্দা রিচার্ড মেধাবী ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মামা, পেশায় শিক্ষক স্বরূপ বাগ বলেন, ‘‘বছর দুয়েক আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে হায়দরাবাদের একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিল রিচার্ড। অতিমারির কারণে এখন বাড়ি থেকেই কাজ করছিল। আগামী ডিসেম্বর মাসেই ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিল।’’ স্বরূপবাবু জানান, তাঁর দিদি-জামাইবাবু কয়েক দিন টিভির সামনেই বসে ছিলেন। মাঝেমধ্যেই ভাইকে ফোন করেছেন রিচার্ডের মা। পরিবারের তরফে স্বরূপবাবুই পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন।

এ দিন তনুময়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিজন, বন্ধু, প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন। শেক্সপিয়র সরণির একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন তনুময় এবং তাঁর মামা সুখেন। দুঃসংবাদ শুনে এসেছেন সহকর্মীরাও। মামা-ভাগ্নের পাহাড়ের নেশার কথা অজানা নয় তাঁদেরও। এর আগেও সান্দাকফু এবং পরে হিমাচলপ্রদেশের বালিপাসে ট্রেকিং করেছেন মামা-ভাগ্নে।

তনুময়ের বাবা অমিতবাবু জানান, নবমীর দিন তাঁর ছেলে জানিয়েছিলেন, ট্রেকিং শুরু করলে ৯ দিন মোবাইল সংযোগ থাকবে না। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে উত্তরাখণ্ডে দুর্যোগের কথা শুনেই বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল বাবা-মায়ের। য‌োগাযোগ করেন হরিদেবপুর থানায়। পুলিশের মাধ্যমে উত্তরাখণ্ডে যোগাযোগ করলে মেলে ছেলের মৃত্যু সংবাদ। দুঃসংবাদ শুনে তনুময়ের বাড়িতে যান স্থানীয় পুর কো-অর্ডিনেটর এবং বিধায়ক। তাঁদের কাছে বাবা-মায়ের আর্তি, দেহ যেন বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সন্তানের মুখ শেষ বার দেখতে চান তাঁরা। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তথা পরিবহণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে মৃতদেহ পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

এ দিকে, উত্তরাখণ্ডে উদ্ধারকাজে গতি বাড়িয়েছে সে রাজ্যের সরকার। সূত্রের খবর, শনিবার হতাহত এবং নিখোঁজ পর্যটকদের একটি তালিকা প্রশাসনের হাতে এসেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, বিপর্যয়ে এখনও সাত জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত (দেহ শনাক্ত হওয়ার পর যা সরকারি ভাবে জানানো হয়) করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। আহত এবং নিখোঁজদের মধ্যেও এ রাজ্যের এক জন করে রয়েছেন। উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বর জেলা প্রশাসন এ দিন জানিয়েছে, প্রীতম রায়, সাগর দে, চন্দ্রশেখর দাস এবং সরিৎশেখর দাস এখনও ‘নিখোঁজ’। তল্লাশি চলছে। এর চেয়ে বেশি সরকারি ভাবে এখন আর কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে কলকাতার বাকি ছ’জন পর্যটক সুরক্ষিত।

মৃতদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা বিকাশ মাকাল (৩৩), সৌরভ ঘোষ (৩৪) এবং কলকাতার তনুময় তিওয়ারির (৩০) দেহ উত্তরকাশী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁদের ময়না-তদন্ত এ দিন হয়েছে। কলকাতায় দেহ কবে ফেরানো হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। কালীঘাটের শুভায়ন দাস (৩৪) এবং বারুইপুরের রিচার্ড মণ্ডলের (৩০) দেহ হিমাচলের দিক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত অনিতা রাওয়াত (৩৮) দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দা। তাঁর সহযোগী মৃত উপেন্দ্র চৌহান উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দা মিঠুন দাড়ি (৩১) উত্তরকাশী জেলা হাসপাতালে ভর্তি। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, মিঠুনকে কপ্টারে দিল্লি আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় আজ, রবিবারও কপ্টার উড়বে কি না, সন্দেহ।

সূত্রের খবর, সেনা এবং বিপর্যয় মোকাবিলাকারী দল তল্লাশি চালাতে কানাকাটা পাসে পৌঁছেছে। এ দিন চার বার হেলিকপ্টার উড়লেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য দুর্ঘটনাস্থল চিহ্নিত করা যায়নি। আজ, ফের কপ্টার উড়বে। প্রশাসন জেনেছে, ৪ মোটবাহক বাগেশ্বরে এসে প্রথমে বিপদের খবর দেন। সম্ভবত দেবী কুণ্ডের কাছেই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। হিমাচল প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, লাহুল-স্পিতি জেলায় ৫৯ জন ট্রেকারকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কোনও মৃত্যু বা আটকে থাকার খবর নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement