তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। — ফাইল চিত্র।
তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে যখন সিবিআই তল্লাশি চালাচ্ছিল, তিনি সেই সময় পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন নিজের মোবাইল ফোন। সেই মোবাইল পুকুর থেকে উদ্ধার করে সেখান থেকে ‘তথ্য’ উদ্ধার করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। সেই ‘তথ্য’ জায়গা পেয়েছে জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে তাদের চার্জশিটে। সেখানে সিবিআই দাবি করেছে, এক জন চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাটে কথোপকথন হয়েছিল জীবনকৃষ্ণের। টাকার বিনিময়ে তাঁকে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরে ওই প্রার্থীর সুপারিশপত্র আদালতের নির্দেশে বাতিল হলে তিনি টাকা ফেরত চান। সেই সময় পাল্টা তাঁকে ‘হুমকি’ দেন জীবনকৃষ্ণ।
সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, পুকুর থেকে উদ্ধার মোবাইলের ‘তথ্য’ ঘেঁটে গোয়েন্দারা একটি হোয়াট্সঅ্যাপ চ্যাট উদ্ধার করেছেন। সেখানে দীপক দাস নামে এক চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে জীবনকৃষ্ণের কথোপকথন রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে চার্জশিটে। ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) আয়োজিত পরীক্ষার প্রার্থী ছিলেন তিনি। সিবিআইকে দীপক জানিয়েছেন, নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তাঁর থেকে ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। নিয়োগ ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আলি ইমাম নামে এক ‘এজেন্ট’-কে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সেই এজেন্টের কাছ থেকে একটি নোটবুক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, তাতে রয়েছে দীপকের নাম।
হাই কোর্টের নির্দেশে ১৮৩ জনের চাকরির সুপারিশ বাতিল হয়। সেই তালিকায় নাম রয়েছে দীপকের। এর পরেই জীবনের থেকে টাকা ফেরত চান দীপক। সিবিআইয়ের ওই চার্জশিট অনুযায়ী—
২০২২ সালের ৮ অক্টোবরের সেই কথোপকথন:
দীপক: স্যর, আপনি পুজোর মধ্যে রিটার্নটা দেবেন বলেছিলেন।
জীবনকৃষ্ণ: পুজোর মধ্যে নয়, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, এ রকম হয়েছিল কথা। শোনো, তুমি অ্যাকাউন্ট নম্বরটা দিয়ো। তোমাকে ট্রান্সফার করে দেব। কাল ব্যাঙ্ক খুলুক। সরি কাল বলছি, পরশু, সোম, মঙ্গলবারের মধ্য ট্রান্সফার হয়ে যাবে। পেয়ে যাবে।
দীপক: ব্যাঙ্কে দেবেন?
জীবনকৃষ্ণ: হ্যাঁ, ব্যাঙ্কে দেব আপাতত। তোমার জন্য লোন করতে হল।
এর পর জীবনকৃষ্ণ লিখেছেন, কে কত টাকা পাবেন। আসানসোল, সিউড়ির কোন ব্যক্তি কত পাবেন, তারও একটি হিসাব রয়েছে। ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর দু’জনের মধ্যে আরও এক বার কথোপকথন হয়। সেখানে দীপককে তাঁর কাছে গিয়ে টাকা নিতে বলেন জীবনকৃষ্ণ। এর পর ১৮ অক্টোবর দীপক ফের টাকা চান জীবনকৃষ্ণের থেকে। তখন ‘হুমকি’ দেন জীবনকৃষ্ণ। সিবিআইয়ের চার্জশিট অনুযায়ী সেই কথোপকথন ছিল এ রকম:
দীপক: আমার স্যর টাকাটার দরকার। চারদিক থেকে চাপ। গ্রামের লোকেরা টাকাপয়সা নিয়ে চারদিকে দুর্নাম ছড়িয়ে দিয়েছে।
জীবনকৃষ্ণ: তোমাকে অর্ধেক ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর অর্ধেক ধৈর্য ধরতে হবে। এই নিয়ে এখানে বারে বারে ফোন করবে না। না হলে গ্রেফতার হয়ে যাবে।
দীপক: স্যর, গ্রেফতারির তো ভয় নেই।
জীবনকৃষ্ণ: গ্রেফতারির ভয় না থাকলে এসো। দম থাকলে চলে এসো।
দীপক: না হলে কী করব স্যর? ভয় তো রয়েছে স্যর। স্যর আপনাকে অনুরোধ করি।
জীবনকৃষ্ণ: ওই সব কথা অনুরোধ নয়, আমি যা বলি, তা-ই করি, অতএব চুপ করে থাকো। যখন সময় হবে। আর ফোন করবে না।
এই কথোপকথনই জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে নিজেদের চার্জশিট তুলে ধরেছে সিবিআই।