জোড়হাতে: দাড়িভিট গ্রামে গ্রামবাসী ও নিহতদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান শিক্ষক। এখানেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল নেতা সুবোধ মজুমদার, দেখুন ভিডিয়োয়। নিজস্ব চিত্র।
স্কুল খোলাতে দাড়িভিটের মাঠে বৈঠক ডাকা হয়েছিল মঙ্গলবার। সেই বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে উঠল অভিভাবক এবং বাসিন্দাদের প্রশ্নবাণে। তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সুবোধ মজুমদারই। এমনকি পুলিশের গাড়ি থেকে গুলি চলেছে এমনটা দেখেছেন বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। তা নিয়ে প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডুর কাছে জবাবদিহি চান তাঁদের অনেকে। সেই সঙ্গে যে দুই শিক্ষকদের নিয়োগকে ঘিরে গোলমাল, তাঁদের কেন পুলিশ দিয়ে স্কুলে যোগ দিতে পাঠান হল সেই প্রশ্ন উঠেছে।
স্কুল খোলানোর চেষ্টাকে কেন্দ্র করে ওই প্রশাসনিক বৈঠকে স্কুল ও পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা নিয়েই শাসক দলের এই পঞ্চায়েত সদস্য প্রশ্ন তুলেছেন। বাসিন্দাদের প্রশ্ন একঝাঁক মটর বাইক আসল ওই দিন স্কুলের মাঠে। তারা কারা। সুবোধবাবু বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকই তার জবাব দেবেন তারা কোন স্বার্থে এসেছিল। তা ছাড়া ভুরভুর করে পুলিশ বাহিনী, প্রশাসনের লোকেরা এল। কারা ডাকল। কার ফোনে এল। তারা এলেন কেন? কার কথা মত এল প্রধান শিক্ষক জবাব দেবেন। বিগত দিনে আমরা কখনও দেখিনি শিক্ষকরা কাজে যোগ দিতে গেলে পুলিশ লাগে। প্রধান শিক্ষক জবাব দেবেন আমার প্রশ্ন।’’ পঞ্চায়েত সদস্যের এই প্রশ্নের পর বাসিন্দাদের অনেকে হাততালি দিয়ে সমর্থন করেন।
ওই ঘটনায় গুলি চালাল কে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, কয়েক জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাপস, রাজেশ এবং বিপ্লব। তার মধ্যে দু জন মারা যায়। তিনি বলেন, ‘‘কার গুলিতে নিহত হয়েছে? আমরা দেখেছি পুলিশের গাড়ি থেকে গুলি হয়েছে। পুলিশের গাড়িতে ছিল প্রধান শিক্ষক। সঙ্গে ছিল আর চার শিক্ষক। যদি পুলিশ গুলি না করে তা হলে প্রধান শিক্ষক জানেন কে গুলি চালিয়েছে, কার বন্দুক, পিস্তল থেকে গুলি হয়েছে। তাঁরা সেটা প্রমাণ করে দেবেন।’’ রীতিমতো হাততালি পেয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে সিআইডি তদন্ত করবে। সিবিআই লাগবে কেন? ওখানে তো মাত্র ৪০ জন পুলিশ, আইসি, কনস্টেবল, মাস্টারমশাইরা ছিলেন। তাদের মধ্যেই গুলি চলেছে। এদের জেরা করলেই তো বোঝা যাবে কে গুলি চালিয়েছে। এদের কেন জেরা করা হচ্ছে না?’’
ওই পঞ্চায়েত সদস্যের এমন প্রশ্ন ঘিরে বিরোধীরাও সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন। তাতে শাসক দলের অনেকে বিব্রত। তবে দলেরই একাংশ তাকে সমর্থনও করছে। দাড়িভিট কাণ্ড নিয়ে ‘ব্যাকফুটে’ রয়েছে তৃণমূল। সেই জায়গা উদ্ধারেই তৃণমূল সদস্য সরব কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন উঠেছে।
দাড়িভিটের বিষয়টি নিয়ে এলাকার বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়ালের কাছে গিয়েও তাঁর ক্ষোভের মুখেও পড়েছিলেন প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডু। এ দিন বিধায়ক বলেন, ‘‘এটা কোনও কৌশল নয়। আমিও বলেছি ঘটনার তদন্তের বিষয়টি। সিআইডি সেটা করছে। স্কুল খোলাতে বৈঠক হয়। সমাধান হয়নি। ফের বৈঠক হবে।’’
ওই তৃণমূল নেতা সুবোধ মজুমদার বলেন, ‘‘যা অন্যায় হয়েছে, তা দেখেও কী চুপ করে থাকব? বিষয়টি যদি আমাকে নবান্নে গিয়েও বলতে হয় বলব। আমরা চাই এই ঘটনার তদন্ত হোক। দোষীরা শাস্তি পাক।’’
প্রায় ঘণ্টা তিনেক বৈঠক হলেও স্কুল খোলার বিষয়ে সমাধান সূত্রে বের হয়নি। বারবারই উত্তেজিত হয়ে পড়ছিলেন অভিভাবক থেকে শুরু করে নিহতের পরিবারের লোকেরা।