আতঙ্কে হাওড়া স্টেশনের যাত্রীরাও

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে একইসঙ্গে তিনটি ট্রেনের ঘোষণায় ফুটব্রিজে যাত্রীদের ওঠা-নামায় হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যার জেরেই ঘটে বিপর্যয়। এই ঘটনার পরে নিত্যযাত্রীরা ভয় পাচ্ছেন হাওড়া স্টেশন নিয়েও।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৩
Share:

অকেজো: বন্ধ হয়ে পড়ে হাওড়া স্টেশনের একটি ডিসপ্লে বোর্ড। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

হাওড়া স্টেশন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেল শাখার ট্রেন ধরে অফিস পৌঁছনো তাঁদের কাছে নিত্যদিনের চিন্তার বিষয়। মঙ্গলবার সাঁতরাগাছি স্টেশনে ফুটব্রিজে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা সেই চিন্তা আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে চুঁচুড়ার রমা দাস, চন্দননগরের মৃন্ময়ী হালদার অথবা বালির সাত্যকি চৌধুরীর মতো একাধিক নিত্যযাত্রীর মনে। পূর্ব রেল শাখার ট্রেন ধরে প্রতিদিন হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে ফের উলুবেড়িয়া, আন্দুল অথবা মেদিনীপুরের ট্রেন ধরেন রমা-সাত্যকিরা। তাঁরাই বলছেন, খোদ হাওড়া স্টেশনেও নিজেদের আর নিরাপদ মনে করছেন না তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষ সচেতন না হলে হাওড়া স্টেশনও নিরাপদ নয়।’’

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে একইসঙ্গে তিনটি ট্রেনের ঘোষণায় ফুটব্রিজে যাত্রীদের ওঠা-নামায় হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যার জেরেই ঘটে বিপর্যয়। এই ঘটনার পরে নিত্যযাত্রীরা ভয় পাচ্ছেন হাওড়া স্টেশন নিয়েও। কারণ, তাঁদের অভিযোগ, দক্ষিণ-পূর্ব রেল শাখার ট্রেন ধরতে গিয়ে হাওড়া স্টেশনেই প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাঁদের। দক্ষিণ-পূর্ব রেল শাখার ট্রেন কখন কোন প্ল্যাটফর্মে দেওয়া হচ্ছে, হাওড়া স্টেশনে সেই সংক্রান্ত ডিসপ্লে বোর্ডগুলি ঠিকঠাক কাজ করে না বলে অভিযোগ। ট্রেনের সময়সূচিও সময়মতো ডিসপ্লে বোর্ডে দেওয়া হয় না। এমনকি, কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন ট্রেন ছাড়বে, তার ঘোষণাও আগেভাগে হয় না বলে জানাচ্ছেন যাত্রীরা। ফলে শেষ মুহূর্তে হুড়োহুড়িতে দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি থাকেই। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরে অফিসের ব্যস্ত সময়ে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল শাখার অনেক ট্রেনই সময় মেনে আসা-যাওয়া করছে না। ফলে মাত্রাতিরিক্ত ভিড় হচ্ছে হাওড়া স্টেশনে। সেইসঙ্গে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা।

এ ছাড়াও রয়েছে ফুটব্রিজ সংক্রান্ত সমস্যা। হাওড়া স্টেশনে দক্ষিণ-পূর্ব রেল শাখার ট্রেন ধরার জন্য ওল্ড কমপ্লেক্স থেকে নিউ কমপ্লেক্স যেতে ভরসা ফুটব্রিজই। তাই অফিসের ব্যস্ত সময়ে একাধিক ট্রেন একসঙ্গে স্টেশনে ঢুকলে ওই ফুটব্রিজ ব্যবহার করা রীতিমতো আতঙ্কের হয়ে দাঁড়ায় নিত্যযাত্রীদের কাছে। এক যাত্রীর অভিযোগ, ‘‘ডিসপ্লে বোর্ড অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকার পাশাপাশি, ঘোষণাও সময়মতো না হয় না। তাই একে অন্যের থেকে জেনে তাড়াহুড়ো করে ফুটব্রিজে ওঠা-নামা করতে হয়। ট্রেন ছাড়ার সময়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘোষণা হওয়ায় আরও হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তখন বিপদ মাথায় নিয়ে ছোটাছুটি করতে হয়।’’

Advertisement

যাত্রীদের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছির দুর্ঘটনার পর পূর্ব রেলের বিভিন্ন স্টেশনে আগেভাগে ট্রেন ছা়ড়ার ঘোষণা যাতে করা হয়, সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সকলকে সতর্ক করেছেন। সাঁতরাগাছির মতো ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের জিএম ও ডিআরএম।’’ ডিসপ্লে বোর্ড-সহ হাওড়া স্টেশন সংক্রান্ত অন্য অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সাঁতরাগাছি-দুর্ঘটনার পরে অন্য স্টেশনগুলিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষকে ফোন করা হলে তিনি সাফ বলেন, ‘‘ডিআরএমের সঙ্গে কথা বলুন।’’ দক্ষিণ–পূর্ব রেলের ডিআরএম আর কে রেড্ডিকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। এসএমএস করা হলেও তার
উত্তর আসেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement