ফাইল চিত্র।
আমপানে ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিটি চালু হয়েছিল ত্রাণ বণ্টনের মাঝপথে, এ বার গোড়া থেকেই সেই পদ্ধতিতে কাজ শুরু করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সিদ্ধান্ত ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজে দলের কেউ যুক্ত থাকবেন না। সবটাই হবে প্রশাসনের মাধ্যমে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আমপান নিয়ে অভিযোগ আসার পরে সরকার ও শাসকদল উভয়কে নিয়েই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল মমতাকে। সর্বত্র যে সুষ্ঠু বণ্টন হয়নি, সেটাও তিনি বুঝেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এ বার আগাম এই ‘সতর্কতা।’
‘ইয়াস’-এর পরে যে ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে তা জানিয়ে বরাদ্দ অর্থের পূর্ণ সদ্ব্যবহারেও কঠোর মনোভাব ঘোষণা করেছেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে পরিস্থিতি পর্যালোচনার পরে বৃহস্পতিবার তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, স্বচ্ছতা ও সদ্বব্যবহারের স্বার্থেই গোটা প্রক্রিয়াটি প্রশাসনিক স্তরেই সম্পন্ন করতে চান তিনি। এবং তা তদারকিতে একেবারে শীর্ষে থাকবেন নিজে।
ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে রাজ্যের একাধিক জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সেই সময় ত্রাণ ও পুনর্গঠনে রাজ্য সরকার যে অর্থ বরাদ্দ করেছিল তা নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও ত্রাণ ও সাহায্য পাওয়ার অভিযোগের কেন্দ্রে ছিলেন শাসকদলেরই একাংশ। ভোটের মুখে সেই অস্বস্তি কাটাতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে হস্তক্ষেপ করতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। তার পরই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সরাসরি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প ঘোষণা করেন মমতা। এ বার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর পরেও ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ একেবারে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে চাইছেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই এ দিন ‘দুয়ারে ত্রাণ’ হিসেবে এই কাজের পরিকল্পনাকে চিহ্নিত করেছেন। এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘ত্রাণের জন্য বরাদ্দ প্রত্যেকটি টাকা ঠিক মতো খরচ হচ্ছে কি না, তা দেখতে হবে।’’
আমপানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্তরে সুপারিশ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সে কথা মাথায় রেখেই গোড়াতেই দলের ভিতরে-বাইরে নির্দিষ্ট বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘কারও কথায় ত্রাণ বণ্টন হবে না।’’ সে কাজ সরকারি আধিকারিকেরা করবেন বলেও জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে সরকারের স্বচ্ছতার প্রতিফলন বলে উল্লেখ করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘এই প্রক্রিয়ায় ত্রাণের কাজ হলে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলার কোনও সুযোগ থাকবে না। দলমত নির্বিশেষে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই উপকৃত হবেন।’’