কুলপিতে জলমগ্ন এলাকা থেকে একটি শিশুকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এক কর্মী। বুধবার। জেলা প্রশাসন সূত্রে
ঘরবাড়ি ভেঙেছে প্রচুর। তবে বিভিন্ন উপকূলবর্তী জেলা থেকে আসা প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দৌরাত্ম্যে পশ্চিমবঙ্গে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেচের।
আজ, বৃহস্পতিবার ও কাল, শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সেখানে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালই দিঘায় পৌঁছে শনিবার সেখানেও প্রশাসনিক বৈঠকে বসবেন তিনি। মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্য প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে আকাশপথে বিপর্যস্ত এলাকাগুলিও ঘুরে
দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কৃষি, ঘরবাড়িরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এই দুর্যোগে বড় সংখ্যায় প্রাণনাশ ঠেকানো গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে জাল ফেলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক জন মৎস্যজীবীর। পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষতে অন্তত ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “এক কোটি মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত। ১৫,০৪,৫০৬ জনকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় তিন লক্ষ বাড়ি। ১৪ হাজার ত্রাণ শিবির চলছে। ১৩৪টি বাঁধ ভেঙেছে। চাল, ১০ লক্ষ ত্রিপল, পোশাক, ১০ কোটি টাকার ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। ক্ষতি হয়েছে মৎস্য, উদ্যানপালন, প্রাণিসম্পদেরও। সব দফতরের অফিসারেরা বিভিন্ন বিপর্যস্ত এলাকায় আছেন। জেলা প্রশাসনগুলি আগে তো মানুষকে বাঁচাক, তার পরে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য দেবে।”
উপকূলবর্তী জেলায় ঝড়বৃষ্টিতে যত না ক্ষতি হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এবং নদীতীরবর্তী এলাকাও জলের তলায়। সমুদ্রের বাঁধ এবং নদীবাঁধ টপকে জল ঢুকেছে বহু গ্রামে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ দিন ভোর ৫টা থেকে বেলা ১১-১২টা পর্যন্ত জেলায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ের দাপট চলার কথা ছিল। জোয়ার এবং পূর্ণিমার কটালের সময় ঝড় হানা দিলে কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। সকাল ৭টায় জোয়ারের সূচনা থেকেই সমুদ্রে প্রবল জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়। সেই সময় মন্দারমণির কালিন্দী গ্রামে মাছের ভেড়িতে কর্মরত এক প্রৌঢ় জলের স্রোতে পড়ে মারা যান। পরে তাঁর দেহ ভেসে আসে। নিখোঁজ হয়েছেন অন্য এক যুবকও। তছনছ হয়ে গিয়েছে দিঘা। সৈকতের গার্ডওয়াল টপকে জলে ভেসে যায় শহর। অমরাবতী পার্ক, মেরিন অ্যাকোয়ারিয়াম, থানাতেও কোমর-সমান জল।