এ ভাবেই কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু গ্রাম। বৃহস্পতিবার গোসাবায়। —নিজস্ব চিত্র
তাণ্ডবের পরে অতিক্রান্ত ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু আমপানে দুই জেলার পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির খতিয়ান তৈরি করাই গেল না। সাগরদ্বীপের বেশ কিছু এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বিদ্যুৎ এবং টেলি যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় শুধু মাত্র রেডিয়ো যোগাযোগের উপরে নির্ভর করেই উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ শুরু করা হয়।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১১টি এবং উত্তরের ৫টি ব্লক আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন আগে থেকেই বিপজ্জনক এলাকা থেকে বাসিন্দাদের শিবিরে আনায় প্রাণহানি খুব বেশি হয়নি। তার পরেও উত্তর ২৪ পরগনায় গাছ ও বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দক্ষিণে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলেও এ দিন রাত পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৮ জন। জখম হয়েছেন ৬৫ জন। প্রায় ২ লক্ষ বড়-মাঝারি গাছ উপড়ে পড়েছে। প্রশাসনের হিসেবে বাড়ি ভেঙেছে ৬ লক্ষ। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুৎ স্তম্ভের সংখ্যা ২০ হাজার। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চাষে। বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে দুই জেলায় প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৩০টি এলাকা।
বুধবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সরুইপুরে ঘরের উপর গাছ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় মা এবং তাঁর তিন বছরের শিশুকন্যার। মায়ের নাম মিনু সর্দার (২৪) এবং মেয়ে পূর্ণিমা। বনগাঁ মহকুমায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতেরা হলেন গোপালনগর থানার গোপীনাথপুর এলাকার বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস (৪৯), এবং বাগদার পূর্ব মালিপোতা গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মণ মুণ্ডারি (৬৯)। বসিরহাট মহকুমায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।
ঝড়ের দাপটে বিপর্যস্ত মিনাখাঁ, সন্দেশখালি। মিনাখাঁয় বিদ্যাধরী নদীর প্রায় এগারোটি জায়গায় বাঁধ ভেঙে যায়। উচিলদহ, গড়কুয়াটি, ভাঙাপাড়া-সহ প্রায় ১৫টি গ্রামে জল ঢোকে। উচিলদহের বাসিন্দারা নদীবাঁধ সারানোর কাজে হাত লাগান। সন্দেশখালি ব্লকে অন্তত ১৫টি জায়গায় নদী উপচে বা বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে। কাটাখালি, দ্বারিকজঙ্গল এলাকাতেও বাঁধ ভেঙেছে।
লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে হাবড়া ও অশোকনগর। কাঁচা বাড়ি, টিনের বাড়ি, টালির বাড়িগুলি গুঁড়িয়ে গিয়েছে। গোবরডাঙাতেও ক্ষয়ক্ষতি প্রচুর। আমপানের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ভাঙড় ১, ২, ক্যানিং ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঝড়ের তাণ্ডবে ভাঙড়ের কাশীপুর থানার কৃষ্ণমাটি গ্রামে
আকলিমা বিবি (৫৫) নামে এক মহিলা মারা যান। পাথরপ্রতিমার জি-প্লটে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে গিয়ে উড়ে আসা টিনের ঘায়ে মৃত্যু হয় বছর সাতেকের এক বালকের। কামরা এলাকার সেহাই গ্রামে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয় এক বৃদ্ধের।
ঝড়ের তাণ্ডবে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার ছাউনি উড়ে গিয়েছে। থানার ভিতরে বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ে। জীবনতলা, কাশীপুর থানার পুলিশ ব্যারাকের ছাউনি উড়ে যাওয়ায় পুলিশ কর্মীদের থাকার সমস্যা হচ্ছে। বহু প্রাথমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের টিনের চাল উড়ে গিয়েছে। কাকদ্বীপ এবং ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় অন্তত ১৫টি জায়গায় নদীর বাঁধ ভেঙে নোনাজলে প্লাবিত হয়েছে এলাকা। লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে সাগরের ঘোড়ামারা দ্বীপ।