Cyclone Amphan

মিলিজুলি পঞ্চায়েতে ক্ষতিপূরণের টাকা বহু সদস্যের নামেই

এলাকায় বহু মানুষের বাড়িঘর ছিন্নভিন্ন হয়েছিল আমপানের তাণ্ডবে। কেউ প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে মাথা গুঁজে আছেন। কেউ এক টুকরো ত্রিপল টাঙিয়ে। 

Advertisement

দিলীপ নস্কর

রায়দিঘি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২০ ০৩:২০
Share:

পশ্চিম জটাগ্রামে এ ভাবেই আছেন মহাদেব মাইতি। নিজস্ব চিত্র

তিন দল মিলিয়ে পঞ্চায়েতে সদস্য সংখ্যা ১৮ জন। অভিযোগ, প্রায় সকলেরই নাম ছিল বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণের তালিকায়। অনেকে টাকা পেয়েও গিয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। কারও কারও আত্মীয়-পরিজনের নামেও টাকা এসেছে বলে অভিযোগ। প্রধান দু’পাঁচ হাজার টাকা কাটমানি নিয়ে অনেককে ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দিয়েছেন বলে বিরোধীদের দাবি।

Advertisement

আমপান-বিধ্বস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যখন একের পর এক পঞ্চায়েত দুর্নীতি-স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভে উত্তাল, তখন রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতে সব ‘শান্তিপূর্ণ ভাবে’ চলছে বলে জানালেন প্রধান গোবিন্দ কর। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন গোবিন্দ।

স্থানীয় বিজেপি নেতা পলাশ রানার বক্তব্য, ‘‘আসলে কোনও বিরোধী না থাকায় এই কাণ্ড। কারও কোনও উচ্চবাচ্যও নেই! সকলের নামই আছে ক্ষতিপূরণের তালিকায়। টাকা পেয়েও গিয়েছেন অনেকে।’’

Advertisement

বিষয়টি নজরে এসেছে জেলা প্রশাসনের। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘বিডিওকে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাতে বলেছি। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’

প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই পঞ্চায়েতে তিন দলের মিলিজুলি বোর্ডের ১৮ সদস্যের অনেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই ঢুকেছে ক্ষতিপূরণের ২০ হাজার করে টাকা! যদিও কারও বাড়ি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কানে আসেনি। কারও একতলা, কারও দোতলা বাড়ি বহাল তবিয়তে।

অন্য দিকে, এলাকায় বহু মানুষের বাড়িঘর ছিন্নভিন্ন হয়েছিল আমপানের তাণ্ডবে। কেউ প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে মাথা গুঁজে আছেন। কেউ এক টুকরো ত্রিপল টাঙিয়ে।

পঞ্চায়েতে ১১টি আসনে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। সিপিএম জিতেছিল ৫টি আসনে। এসইউসি পায় ২টি আসন। তৃণমূলের একাংশ সিপিএম এবং এসইউসিকে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গড়ে। প্রধান হন তৃণমূলের গোবিন্দ।

তারকমণ্ডলেরঘেরি গ্রামে থাকেন গোবিন্দ। দেখা গেল, ঘেড়িমোড়ের পাশে তাঁর পেল্লায় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে পঞ্চায়েতে কোনও সমস্যা নেই। সব শান্তিপূর্ণ ভাবে চলছে।’’ সর্বদল বৈঠক ডেকে কমিটি গড়ে ক্ষতিপূরণের তালিকা তৈরি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এলাকার এত মানুষ যে বাড়িঘর হারিয়েও এখনও কিছুই পেলে না? প্রশ্ন শুনে সটান ফোন কেটে দেন প্রধান।

এলাকার বাসিন্দা তৃণমুল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য অলোক জলদাতার সাফাই, ‘‘তাড়াহুড়ো করে তালিকা তৈরি করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হয়েছে। তা ছাড়া, পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নাম নেওয়ায় একই পরিবারের একাধিক নাম তালিকায় ঢুকে গিয়েছে।’’

সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশ মুদির অবশ্য দাবি, তাঁর বাড়ির ক্ষতি হয়নি। ক্ষতিপূরণের টাকাও পাননি। প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কোনও সদস্য টাকা পাননি। কবে কেউ আবেদন করেছিলেন কিনা, বলতে পারব না।’’

পঞ্চায়েতের এসইউসি সদস্য বাবলু খামারির কথায়, ‘‘প্রথম দিকে সকলেরই কমবেশি ক্ষতি হয়েছিল। তাই সকলেরই নামের তালিকা পাঠানো হয়েছিল।’’ দলের নেতা গোপাল সেন বলেন, ‘‘চার দলের কমিটি গড়ে নতুন তালিকা তৈরি করে স্বচ্ছ্ব ভাবে তালিকা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যদের নাম বাদ গিয়েছে।’’

গ্রামের অনেকে এখনও দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পশ্চিম জটাগ্রামে গিয়ে দেখা হল মহাদেব মাইতির সঙ্গে। ঘরের চালে ত্রিপল লাগানোর কাজ করছিলেন। বললেন, ‘‘ঝড়ে পুরো বাড়িটা্ই তছনছ হয়ে যায়। ধারদেনা করে কোনও রকমে ঘর সারিয়েছি। রাতে জোরে বৃষ্টি পড়লে জল ঢোকে ঘরে। তখন পলিথিন জড়িয়ে নিই গায়ে।’’ পাশের গ্রামের পাঁচুগোপাল হালদারের খড়ের ছাউনির কুঁড়ে ঘরের চালের একাংশ ঝড়ে উড়ে নিয়ে গিয়েছিল। ত্রিপল কিনে সারাই করেছেন। সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি বলেই জানালেন। মহাদেবের কথায়, ‘‘যাদের পাকা বাড়ি, তারা সব টাকা পেয়ে গেল। অথচ, আমাদের অবস্থা কারও চোখে পড়ে না।’’

গ্রামের আর এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা তো আর ৫-১০ হাজার টাকা কাটমানি দিতে পারব না। তাই ক্ষতিপূরণ পাইনি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement