প্রতীকী ছবি।
আমপানের জেরে টানা তিন দিন জল আর বিদ্যুৎ না-পেয়ে ক্রমেই ধৈর্য হারাচ্ছে হাওড়া। করোনার সংক্রমণ এড়াতে বর্তমানে যে সামাজিক দূরত্ব-বিধি মেনে চলার কথা, শনিবার তার তোয়াক্কা না করেই বিক্ষোভে নামলেন হাওড়াবাসী। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে জল আর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে হবে।
পুরসভার পাঠানো গুটিকয় জলের ট্যাঙ্কার থেকে জল নেওয়া নিয়ে মারামারির পাশাপাশি বিদ্যুৎকর্মীদের আটকে রেখে রাস্তা অবরোধ— হাওড়ায় এ দিন ক্ষোভের সব রকম প্রকাশই দেখা গেল। তবে সব চেয়ে বেশি উদ্বেগ বাড়াল ভিন্ রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের করোনা-পরীক্ষার ফলাফল। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, হাওড়া স্টেশনে পৌঁছনোর পরে যে সমস্ত শ্রমিকের করোনা-পরীক্ষা হয়েছিল, তাঁদের ৮০ শতাংশেরই রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে।
এ দিকে, আমপান আছড়ে পড়ার পরেই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে গোটা হাওড়া। প্রায় ৭০টি বাতিস্তম্ভ-সহ হাজার দুয়েক গাছ উপড়ে যায়। বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ায় বহু এলাকায় অন্ধকার নেমে আসে। পুরকর্তাদের সাফাই, এত বড় বিপর্যয় মোকাবিলা করার মতো পরিকাঠামো তাঁদের নেই।
এ দিন হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘কলকাতার যে পরিকাঠামো রয়েছে, তা আমাদের নেই। কলকাতা পুরসভাই যখন সব গাছ কেটে সরাতে পারেনি, তখন হাওড়ার পক্ষেও তিন দিনে তা সম্ভব নয়।’’
পানীয় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করার দাবিতে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় অবরোধ করা হয় মধ্য হাওড়ার পঞ্চাননতলা, দালালপুকুর, শরৎ চ্যাটার্জি রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায়। একই দাবিতে অবরোধ চলে কোনা এক্সপ্রেসওয়ের বেতড় মোড়ে। পরে পুলিশ এসে বুঝিয়ে অবরোধ তুলে দেয়।
পুলিশ জানায়, এ দিন বিদ্যুতের দাবিতে নেতাজি সুভাষ রোডের ঘোষপাড়ার উত্তেজিত বাসিন্দারা সিইএসসি-র দুই কর্মীকে আটকে রাখেন। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ওই সংস্থার ক্যাশ অফিসে। সারা দিন প্রায় নির্জলা কেটে যাওয়ার পরে পুরসভা শুক্রবার রাতে দু’টি জলের ট্যাঙ্কার পাঠিয়েছিল শিবপুর বাজারের কাছে। কয়েকশো মানুষ তখন সামাজিক দূরত্ব-বিধি না মেনেই হুড়োহুড়ি করে জল নিতে যান। তা নিয়ে মারপিট বেধে যায়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে জল না দিয়েই পালিয়ে যান ট্যাঙ্কারের চালকেরা।
তবে এ দিন দুপুর থেকে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের তিনটি মোটর ঠিক হয়ে যাওয়ায় শহরের কয়েকটি এলাকায় জল সরবরাহ শুরু হয়। তাতে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। পুরসভার দাবি, আজ, রবিবার জল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এর মধ্যেই করোনা নিয়ে ফের উদ্বেগের খবর। ট্রেনে যে সব পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরেছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশই পজ়িটিভ। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছে, করোনা পজ়িটিভদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা চলবে। তাঁদের উপরে নজর থাকবে স্বাস্থ্য দফতরের।’’