মাইকে প্রচার উপকূল এলাকায়।
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ, মঙ্গলবার বিকাল থেকে জেলায় বৃষ্টিপাত শুরু হবে এবং আগামী কাল, বুধবার ‘আমপান’ আছড়ে পড়তে পারে জেলার উপকূলবর্তী এলাকায়। তাই সোমবার থেকেই ঝড়ের মোকাবিলায় প্রস্তুতি শুরু করে দিল জেলা প্রশাসন।
প্রশাসন সূ্ত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় দিঘায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এসে পৌঁছেছে। তারা রামনগর-১ ব্লকের পদিমাতে ‘ফ্লাড রেসকিউ সেন্টারে’ রয়েছে। এছাড়া, রাজ্য সরকারের সিভিল ডিফেন্সের একটি দল হলদিয়াতেও এসেছে। এ দিন সকালে দিঘা, মন্দারমনি, তাজপুর এবং শঙ্করপুর এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে মাইকে প্রচার করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বিকেলে কাঁথি-১, দেশপ্রাণ, রামনগর-১ এবং ২, খেজুরি-২ ব্লকের সমুদ্র লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের সরানো শুরু হয়েছে। রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুসারে, প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দাকে সরানো হয়েছে।
ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের উদ্ধার করতে হলদিয়াতেও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য রবিবার রাতেই পৌঁছেছে রাজ্য সরকারের পাঠানো ত্রাণ সামগ্রী। জেলা প্রশাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা দফতর সূত্রের খবর, জেলার জন্য বরাদ্দ ৪০ হাজার ত্রিপল এসেছে। এছাড়া, বিশেষ ত্রাণ হিসাবে ৩৮৫ মেট্রিকটন চাল পাঠানো হয়েছে। রবিবার রাতেই ত্রাণ কাঁথি, হলদিয়া, এগরা ও তমলুক মহকুমার প্রতি ব্লকে পাঠানো হয়েছে।
জেলায় পৌঁছল ত্রিপল-ত্রাণ। নিজস্ব চিত্র
কাঁথি মহকুমাশাসকের অফিস-সহ মহকুমার প্রতি ব্লকে এবং জেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রয়োজনে পঞ্চায়েত অফিসেও কন্ট্রোল রুম খোলা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ দিন ঝড় সংক্রান্ত একটি বৈঠক করেন কাঁথির মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য। ঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলাশাসক পার্থ ঘোষও বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন থেকেই সমুদ্র উপকূলবর্তী পাঁচটি ব্লকের প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরানো হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে জেলায় বৃষ্টিপাত হবে ও বুধবার নাগাদ ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইক প্রচার চলছে। উদ্ধার ও ত্রাণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’’
এই বিষয়ে পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ফণী ঝড়ের সময় তিনটি জেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার যাতে সেরকম কোনও ঘটনা না ঘটে, সে জন্য জেটিগুলিতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। লকডাউনে এমনিতেই জলপথে যাত্রী পরিবহণ বন্ধ। তা-ও আগামী ৭২ ঘণ্টায় যাতে নৌকো বা ভুটভুটি বেআইনি ভাবে চলাচল করতে না পারে, তা দেখার জন্য জলসাথীদের জেটি এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।’’
প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা দফতর সূত্রের খবর, দিঘা উপকূলবর্তী এলাকায় মৎস্যজীবীদের অস্থায়ী আস্তানা এবং বসতবাড়ি থেকে স্থানান্তর করে সাইক্লোন রেসকিউ সেন্টার ও ফ্লাড শেল্টার সহ সংলগ্ন স্কুলগুলিতে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, উপকূলবর্তী এলাকায় মাইক প্রচার করা হচ্ছে এবং বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের সরানো হয়েছে।’’