‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পে বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রমের ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল দেওয়ার জন্য পদ্ধতি মেনে আগেই আবেদন করেছিল জেলার স্কুলগুলি। অথচ, ২ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী বান্দোয়ানে ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করার পরে সাইকেল দেওয়া শুরু হলেও সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রমের পড়ুয়ারা।
দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের স্কুলে যাতায়াতের সুবিধার্থে সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের তহবিল থেকে ওই সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। সে প্রশ্নে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু সমস্যা তৈরী হয়েছে বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রমের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকের স্কুলগুলিতে সাধারণ পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রমের দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী কত, তা জানতে চেয়ে বিভিন্ন ব্লকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জেলার বিভিন্ন ব্লকের বিডিও-রা জানাচ্ছেন, প্রথমে সাধরণ পাঠ্যক্রমের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা পাঠানো হয়েছিল। পরে বৃত্তিমূলক পড়ুয়াদের সংখ্যাও জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও সবুজ সাথী প্রকল্পে তাঁরা ব্রাত্য থাকবে কেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই।
জেলার এক বিডিও-র কথায়, ‘‘যদি বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রমের পড়ুয়াদের সবুজ সাথী প্রকল্পের বাইরে রাখার সিদ্ধান্তই নিয়ে তাকে রাজ্য সরকার, তাহলে আগেই ওই মর্মে নির্দেশিকা জেলায় পাঠানো উচিত ছিল।” জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে পুরুলিয়াতে ৬৫টি স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রম পড়ানো হয়। মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। এখন প্রশ্ন, উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলে রাজ্য উচ্চশিক্ষা সংসদের সমতূল্য শংসাপত্র পাওয়া যায়। পরে কলেজে ভর্তি কিংবা বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় ওই শংসাপত্র মান্যতাও পায়। তা হলে কেন সাইকেল পাওয়ার প্রশ্নে এই বৈষম্য?
রঘুনাথপুরের চেলিয়ামা এলাকার অভিভাবক সুভাষ প্রামাণিক, মাগারাম মাহাতোদোর প্রশ্ন, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাতায়াত করতে সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ পাঠ্যক্রমের পডুয়ারা সাইকেল পেলে আমাদের মেয়েরা কী দোষ করল?’’ চেলিয়মার বিসি গার্লস হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বিশাখা প্রামাণিক, ইন্দ্রানী মাহাতো, পাড়া ব্লকের আনাড়া, উদয়পুরের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সন্দীপ মন্ডল, সুমন দে-র অক্ষেপ, ‘‘এক সঙ্গেই বাড়ি থেকে স্কুলে যাচ্ছি আমরা। অথচ ওরা সাইকেলে আর আমরা, বৃত্তিমূলক পড়ুয়ারা হেঁটে, এটা কেন?’’
এই বৈষম্য কাঙ্খিত নয় বলে মনে করছেন বেশ কিছু স্কুলের প্রধানশিক্ষকেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘সাইকেল পাওয়া নিয়ে একটা বিভাজন তৈরী হচ্ছে সাধারণ ও বৃত্তিমূলর পাঠ্যক্রমের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। এটা কখনও কাম্য নয়।”
তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ‘অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যান্ড ট্রেনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়শন’-এর সম্পাদক পরিতোষ মাহাতো বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কিন্তু কোন সদুত্তর মেলেনি। রাজ্য সরকার এই পাঠ্যক্রমের স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ তারা ব্রাত্য থাকবে ,এটা হয় না।’’ আনাড়া ব্লকের এক ছাত্রী বলছেন, ‘‘বৈষম্য তো বুঝলাম, কিন্তু তা মুছবে কবে?’’