ফাইল চিত্র।
দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের র্যাঙ্কিং (এনআইআরএফ)-এ চলতি বছরে প্রথম ১০০-র মধ্যে রয়েছে আইআইটি খড়্গপুর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরের মতো এ বারেও প্রথম ১০০-য় ঠাঁই হয়নি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সার্বিক তালিকায় তার স্থান ১৫১ থেকে ২০০-র মধ্যে।
সার্বিক মূল্যায়নের নিরিখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে একাদশে। যাদবপুর দ্বাদশে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ই গত বছরের থেকে এক ধাপ এগিয়েছে। আইআইটি খড়্গপুর গত বছরের মতোই পঞ্চম স্থানে রয়েছে। আইআইএসইআর-কলকাতা রয়েছে ২৯তম স্থানে। ৪৩তম স্থানে রয়েছে শিবপুর আইআইইএসটি। বিশ্বভারতী ৬৯তম স্থানে। এনআইটি দুর্গাপুর ৯৬।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রথম ১০০-য় রয়েছে রাজ্যের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়। যাদবপুর, কলকাতা, বিশ্বভারতী, কল্যাণী এবং বর্ধমান। যাদবপুর পঞ্চমে। কলকাতা সপ্তমে। যাদবপুর গত বছরের তুলনায় এক ধাপ এগোলেও, কলকাতা দু’ধাপ নেমে গিয়েছে। ১০১ থেকে ১৫০-এর মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫১ থেকে ২০০-র মধ্যে রয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন: ৩ দিনে চতুর্থ বার তোপ তৃণমূলের, ভাঁওতা দিচ্ছেন শাহ, মন্তব্য পার্থর
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘সকলের জন্যই এই সাফল্য সম্ভব হল। গত কালই কিউএস ওয়র্ল্ড র্যাঙ্কিংয়েও আমরা ভাল ফল করেছি। রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্য না-পেলে অবশ্য আমরা এগোতে পারতাম না।’’ একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় যাদবপুরে কোর্স অনেক কম পড়ানো হয়। আইন, বাণিজ্য বিভাগ নেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে কোনও সাফল্য অনুপ্রাণিত করে। এই সাফল্যের অনুপ্রেরণায় আমরা আরও এগিয়ে যাব।’’
প্রেসিডেন্সিতে একটা কথা শোনা যায়, তুলনামূলক নবীন বলেই তার পক্ষে তালিকার উপরের দিকে আসা সম্ভব হচ্ছে না। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া এ দিনও সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, নবীন বিশ্ববিদ্যালয়কে লড়তে হচ্ছে বহু প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। তাদের তুলনায় প্রেসিডেন্সিতে কোর্স অনেক কম পড়ানো হয়। পিএইচডির সংখ্যা খুবই কম।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছুঁতে চলেছে, এক দিনে আক্রান্ত ৪৪০
কলেজগুলির মূল্যায়ন তালিকায় প্রথম ১০০-তে জায়গা পেয়েছে এ রাজ্যের সাতটি কলেজ। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির একই সঙ্গে সপ্তম স্থানে রয়েছে। রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী কলেজ রয়েছে একাদশে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন আবাসিক কলেজ ২০তম স্থানে। এ ছাড়াও রয়েছে লরেটো, বেথুন এবং লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। সেন্ট জেভিয়ার্সের অধ্যক্ষ ডমিনিক স্যাভিও বললেন, ‘‘আমরা পঠনপাঠন, গবেষণা, প্লেসমেন্ট— সব কিছুতেই অনেক উন্নতি করেছি। আরও উন্নতি করব।’’ রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের অধ্যক্ষ স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ বলেন, ‘‘ঠাকুর-মা-স্বামীজির আশীর্বাদ তো আছেই। পাশাপাশি শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, ছাত্র, অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্রদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এই সাফল্য।’’ যৌথ প্রচেষ্টাকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলে মনে করেন রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী কলেজ, রহড়ার অধ্যক্ষ স্বামী কমলস্থানন্দও।
ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির র্যাঙ্কিংয়ে গত বার চতুর্থ স্থানে থাকা আইআইটি-খড়্গপুর এ বার পঞ্চম। এ ছাড়া, যাদবপুর সপ্তদশ, আইআইইএসটি-শিবপুর ২১তম, এনআইটি দুর্গাপুর ৪৭ স্থানে রয়েছে। হেরিটেজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ১৫৪, রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট) ১৫৭, হলদিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ১৬৩, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ১৯১তম স্থান পেয়েছে। আইআইটি-খড়্গপুরের রেজিস্ট্রার ভৃগুনাথ সিংহ বলেন, ‘‘সার্বিক ভাবে আমরা নিজেদের স্থান ধরে রেখেছি। তবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেন এক ধাপ নেমে গেলাম, তার কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।’’
ম্যানেজমেন্ট তালিকায় আইআইএম-কলকাতা তৃতীয়। আইআইটি-খড়্গপুর পঞ্চম। আইন কলেজগুলির মধ্যে আইআইটি-খড়্গপুর চতুর্থ। ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস ষষ্ঠ। স্থাপত্যবিদ্যায় আইআইটি-খড়্গপুর গত বছরের মতোই প্রথম স্থানে। আইআইইএসটি-শিবপুর এ বার রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে। ফার্মাসি বিভাগে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফার্মাসিউটিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতা ২৭-এ। এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাস ৬১। গুরু নানক ইন্সটিটিউট অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ৬৭।
মেডিক্যালের তালিকায় রয়েছে ৪০টি কলেজের নাম। তাতে রাজ্যের কেউ নেই। দন্তচিকিৎসা কলেজের মূল্যায়ন এ বারই শুরু হল। তবে ৩০টি কলেজের সেই তালিকায় রাজ্যের কোনও প্রতিষ্ঠান নেই।