ছবি-ছড়া-কার্টুন চাই, ইনবক্স খুলছে সিপিএম

সে এক জমানা ছিল। যখন ঘরের কথা বাইরে বেরোলে গোসা হতো সিপিএমের! এখনও প্রাচীনপন্থীদের তেমন প্রতিক্রিয়া হয় মাঝে মধ্যেই। কিন্তু জমানা তো বদলেছে। তাই নয়া জমানায় নয়া প্রজন্মের হাত ধরেই বাইরের কথা ঘরে আনতে চাইছে সিপিএম।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৫
Share:

সে এক জমানা ছিল। যখন ঘরের কথা বাইরে বেরোলে গোসা হতো সিপিএমের! এখনও প্রাচীনপন্থীদের তেমন প্রতিক্রিয়া হয় মাঝে মধ্যেই। কিন্তু জমানা তো বদলেছে। তাই নয়া জমানায় নয়া প্রজন্মের হাত ধরেই বাইরের কথা ঘরে আনতে চাইছে সিপিএম।

Advertisement

দলের প্রচারে আম জনতাকে জড়িয়ে ফেলার প্রচেষ্টায় অভিনব প্রচার শুরু করছে সিপিএমের যুব সংগঠন। সাধারণ ভাবে দলের প্রচারে কোন কথা কী ভঙ্গিতে বলা হবে, ঠিক হয় দলের মধ্যেই। এ বার সেই বাঁধা বুলির জগৎ থেকে বেরোতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সম্ভবত দায়ে পড়েই। মানুষের সঙ্গে দলের সংযোগ এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রচারের উপাদান আমদানি করতে চাওয়া হচ্ছে জনতার মধ্যে থেকেই। জনতার পাঠানো ছড়া, ছবি, ক্যাপশন বা স্লোগান থেকে সেরা বাছাই করে পোস্টারের সেট তৈরি করবে ডিওয়াইএফআই।

এই অভিযানের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘পোস্টার চেয়ে পোস্টার’। সূত্রপাত হচ্ছে রাজধানী কলকাতা থেকেই। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়বে বাকি রাজ্যেও। সোশ্যাল মিডিয়ার ই-দেওয়াল এবং শহরে কংক্রিটের দেওয়ালেও দেখা যাবে ‘পোস্টার চেয়ে পোস্টার’। যেখানে আবেদন জানানো হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ বা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আঁকা ছবি, ক্যাপশন, ছড়া বা কবিতা পাঠাতে পারবেন যে কেউ।

Advertisement

কোথায় পাঠাতে হবে, সেই ইনবক্সের ঠিকানাও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে পোস্টারে। প্রাথমিক ভাবে এই কয়েকটা বিষয় থাকলেও পরে তা আরও ছড়িয়ে পড়বে। আপাতত ২০ জুলাইয়ের মধ্যে বাইরের মতামত ঘরে নিতে চাইছে ডিওয়াইএফআই কলকাতা জেলা কমিটি। তার পরে হবে ঝাড়াই-বাছাই পর্ব। সে সবের পরে অগস্ট মাসে শহরের পোস্টার সেটের প্রদর্শনী হবে। সেরা ছবি বা স্লোগান যাঁরা পাঠাবেন, তাঁদের সৃষ্টিশীলতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ভাবনাও রয়েছে বলে যুব সংগঠন সূত্রের খবর।

ভাবনায় এই পরিবর্তনের স্রোত অবশ্য একেবারে আনকোরা নয়। সিপিএমের যুব সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে তাপস সিংহ বিদায় নিয়েছিলেন কয়েক বছর আগের যে বেঙ্গালুরু সম্মেলনে, সেখানেই রাজনৈতিক প্রতিবেদনে মেনে নেওয়া হয়েছিল চেনা ছকের স্লোগানে আর নতুন প্রজন্মের মন টানা সম্ভব নয়। তার পরে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনেও বিষয়টি চর্চায় এসেছিল। অধুনা প্রয়াত বিনয় কোঙার দক্ষিণ দিনাজপুর ঘুরে এসে বলেছিলেন, সেখানে স্থানীয় কৃষিজীবীরা স্লোগান তৈরি করেছেন ‘কলকাতা হবে লন্ডন, কৃষকের হাতে লণ্ঠন’! তাঁর মত ছিল, কেতাবি স্লোগানের চেয়ে সাধারণ মানুষের মুখের এই ভাষা অনেক বেশি আকর্ষণীয়।

ইদানীং কালে বাঁকুড়া বা উত্তর ২৪ পরগনার মতো কিছু জেলা নেতৃত্ব নিজেদের কর্মসূচিতে সোশ্যাল মিডিয়ার মারফত বাইরের মতামত নিয়েছেন। এখন সেটাই আরও সার্বিক ভাবে ছড়িয়ে দিতে চাওয়া হচ্ছে সংগঠনের নানা স্তরে।

ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি সায়নদীপ মিত্রের কথায়, ‘‘আমরাই সব জানি, এটা আমরা ধরে নিতে চাই না! মানুষ তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে অনেক কিছুই বোঝেন। তাঁদের পাঠানো ছবি, কার্টুন বা কবিতা থেকে আমাদের আন্দোলনের বিষয়ও উঠে আসতে পারে।’’ একই সুর দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে যুব সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সুজন চক্রবর্তীরও। তিনি বলছেন, ‘‘দলের বাইরেও বহু মানুষের বিপুল সৃষ্টিশীলতা আছে। তাঁদের মতামত সঙ্গে নিতে পারলে সার্বিক ভাবেই ভাল হয়। মানুষ কী চাইছেন, তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আরও মসৃণ হয়।’’

দলের মধ্যেই কেউ কেউ বলছেন, কম্পিউটার বিরোধিতার ইতিহাস মুছে ফেলে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়ে ওঠার মতো এ কাজেও অনর্থক দেরি হল! অন্যেরা আবার পাল্টা বলছেন, কখনও না হওয়ার চেয়ে তো বিলম্বেও ভাল! বেটার লেট দ্যান নেভার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement