জোট বহাল থাকছে। কিন্তু সেই সঙ্গে জারি থাকছে নানা টানাপড়েনও!
ভোটে হারতে হলেও শাসক দলের সন্ত্রাস-সহ রাজ্যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপাতত বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া রেখে চলা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটি। একই ফয়সালা হয়েছে রবিবার প্রদেশ কংগ্রেসের বৈঠকেও। সিপিএম কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে বামফ্রন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে শরিকেরা, তারাও সূর্যকান্ত মিশ্রদের কৌশলে ভাবনায় পড়েছেন! আবার এরই মধ্যে আজ, মঙ্গলবার বীরভূমে বামফ্রন্টের সাংসদ ও বিধায়কদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নতুন করে গুঞ্জন তৈরি করেছে বিরোধী শিবিরে!
কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বামেদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে একের পর এক ঘটনাস্থলে দৌড়চ্ছেন মান্নান। বামেদের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর সঙ্গে মান্নানকে এখন জুটি হিসাবেই দেখা হচ্ছে। সেই মান্নানই বীরভূমের প্রতিনিধিদলে অংশ না নেওয়ায় জল্পনা তৈরি হয়েছে, তা হলে কি কংগ্রেসের মধ্যেই বিরোধী দলনেতাকে টেনে ধরার চেষ্টা শুরু হল? অল্প দিনেই চাঁপদানির প্রবীণ বিধায়ক যে ভাবে নিজের দৃশ্যমানতা বাড়িয়ে ফেলেছেন, তাতে কি প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরে অস্বস্তি তৈরি হল? দলে এমন কিছু ঘটেছে বলে কংগ্রেস নেতারা প্রকাশ্যে কেউই স্বীকার করতে রাজি নন। তবে জোটকে মর্যাদা দিতে সিপিএম যে প্রতিনিধিদলে পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিম, পরিষদীয় নেতা সুজন ও সাংসদ ঋতব্রতকে পাঠাচ্ছে, সেখানে মান্নান বা প্রথম সারির কোনও কংগ্রেস নেতার না থাকা বাম শিবিরে চর্চার রসদ হয়েছে। তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সিউড়িতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে আজ ধর্নায় যোগ দেবেন বাম সাংসদ ও বিধায়কেরা। তার পরে তাঁরা যাবেন খয়রাশোলের নওয়াপাড়া গ্রামে, যেখানে একটি আইসিডিএস কেন্দ্র উড়ে গিয়েছে মজুত বোমার বিস্ফোরণে। মান্নান সোমবার বলেন, ‘‘বিধানসভায় কিছু কাজ রয়েছে বলে বীরভূমে যেতে পারছি না। তবে কংগ্রেস জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি ও হাঁসনের বিধায়ক মিল্টন রশিদ ওখানে থাকবেন।’’ অস্বস্তি আড়াল করে সুজনবাবুও বলেন, ‘‘সব জায়গায় বিরোধী দলনেতাকে পাওয়া না-ও যেতে পারে। তা ছাড়া, মান্নানদার রোজা চলছে।’’ মান্নান যেতে না পারলেও কলকাতা থেকে কংগ্রেসের অন্য কোনও বিধায়ক বা পরিচিত মুখ কেন প্রতিনিধিদলে সামিল হচ্ছেন না, সে প্রশ্ন থাকছেই।
এই প্রশ্ন থাকলেও সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে সূর্যবাবুদের সিদ্ধান্তের জেরে আবার ভাবতে বসতে হচ্ছে বাম শরিকদের। সূর্যবাবুরা বলেছেন, বাম দলগুলির নিজস্ব কর্মসূচি থাকবে। ফ্রন্ট কিছু কর্মসূচি নেবে, বাইরের বাম দলগুলিকে কাছে টানার চেষ্টা করবে। সেই সঙ্গেই বিধানসভার ভিতরে-বাইরে কংগ্রেসের সঙ্গে একত্র অভিযান চলবে। এর পরে আর এক কথায় হেস্তনেস্ত করে ফেলা সহজ হচ্ছে না শরিক নেতৃত্বের পক্ষে! আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী যেমন এ দিন বলেছেন, ‘‘সব দিক রেখে সিপিএম একটা অবস্থান নিয়েছে। এর পরে আমাদের ভাবতে হবে কতটা সিপিএমের সঙ্গে যাব আর কতটা যাব না। দলে আলোচনা করে বামফ্রন্টে জানাব।’’ একই ভাবে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানি জানাচ্ছেন, তাঁরা আগামী ২৫-২৬ জুন দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে কংগ্রেস-প্রশ্নে আলোচনা করতে চান। যদিও বীরভূমে আজ প্রতিনিধিদলে ফ ব বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর) থাকছেন।
সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতা মঞ্জুকুমার মজুমদার মেনে নিয়েছেন, ‘‘পরিষদীয় রাজনীতিতে অনেক সময়েই বিষয় ভিত্তিতে অন্য অনেক দলের সঙ্গে প্রতিবাদে যেতে হয়। সংসদে আমাদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে বিজেপিও প্রতিবাদ করেছে।’’ তবে শ্রম আইন সংস্কার-সহ যে সব বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে কংগ্রেসকে ছাড় দেওয়ার উপায় নেই, সেখানে তাঁরা আপসে রাজি নন বলেই ফ্রন্টকে জানিয়ে দিতে চান মঞ্জুবাবুরা।