রাজ্যে বিধানসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূলের দাপট একচ্ছত্র। তার উপরে সাম্প্রতিক উত্তরপ্রদেশের ফলাফল বিরোধী পরিসরেও বিজেপি-ভীতি বাড়িয়ে দিয়েছে! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোকাবিলায় তারাই প্রধান বিরোধী শক্তি, এই বার্তা বুঝিয়ে দিতে এখন আরও মরিয়া হবেন দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহেরা। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী শক্তি হিসাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে টেট-দুর্নীতির প্রতিবাদে কোমর বেঁধেই নামতে চাইছে সিপিএম। টেট নিয়ে মিছিল করতে গিয়ে জেল হাজতে যাওয়া যুব ও ছাত্র নেতাদের সমর্থনে আজ, মঙ্গলবার শহরে বড়সড় জমায়েত করে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতাই প্রমাণ করতে চাইছে আলিমুদ্দিন।
টেট-দুর্নীতির প্রতিবাদে ডিওয়াইএফআই এবং এসএফআইয়ের মিছিলে পুলিশের লাঠি চলেছিল ধর্মতলায়। তার পরে জনজীবনে শৃঙ্খলা ও জনসম্পত্তি রক্ষা আইনের ধারা প্রয়োগ করে প্রতিবাদী যুব ও ছাত্র নেতাদের মধ্যে ৮ জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের ফের ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হবে আজ। তখনই শিয়ালদহ ও ধর্মতলা থেকে মিছিল করে ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে জমায়েত ও বিক্ষোভ-সভা করবে সিপিএমের দুই গণসংগঠন। পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করেই ১৪৪ ধারা এড়াতে ময়দানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে গিয়ে আবার ইডেন গার্ডেন্সের সামনে থেকে মিছিলের চেহারা নিয়ে বাবুঘাট ও স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে যাওয়া হবে ব্যাঙ্কশাল কোর্টের দিকে। সুজন চক্রবর্তী, নেপালদেব ভট্টাচার্য, শমীক লাহিড়ী, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন এসএফআই নেতাদের বিক্ষোভ-সভায় থাকার কথা। রাজ্য বামফ্রন্টের তরফেও সোমবার বিবৃতি দিয়ে মিথ্যা মামলায় ছাত্র, যুবদের ফাঁসানোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
তিন বছর আগে লোকসভা ভোটে বিজেপি-র সাফল্যের পরে রাজ্যে বিরোধী পরিসরে থাবা বসিয়েছিল গেরুয়া শিবির। আগামী বছর রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। উত্তরপ্রদেশে মোদী-ঝড়ের ধাক্কায় গ্রামে গ্রামে নিচু তলায় অন্যান্য বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের আবার গেরুয়া পতাকা হাতে নেওয়ার আশঙ্কা করছেন বাম নেতৃত্ব। তাই বিজেপি-কে সুযোগ না দেওয়ার জন্যই মমতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে কোনও ঢিলে দিতে চায় না আলিমুদ্দিন। বিশেষত, টেট যেখানে চাকরিপ্রার্থী তরুণ প্রজন্মের কাছে স্পর্শকাতর বিষয়। বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবুর কথায়, ‘‘সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং রাজ্যের স্বৈরাচারী শক্তি, এই দুইয়ের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই। রাস্তায় থেকেই আমরা লড়াই করব।’’ পাশাপাশিই, এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস এ দিন বলেছেন, ‘দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গিয়ে সাজানো মামলায় যে ভাবে ছেলেমেয়েদের জেলে যেতে হয়েছে, তারই প্রতিবাদ হবে রাস্তায়।’’ ঋতব্রতের মন্তব্য, ‘‘যারা বিধানসভা ভেঙেছিল, তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই কলেজে ভাঙচুর হচ্ছে। সেখানে ওই আইন চলছে না! আর যারা দুর্নীতি করেও নবান্নে বসে আছে, তারা রাস্তায় প্রতিবাদীদের ওই আইন দিয়ে জেলে ভরছে!’’ বাংলায় ‘গণতন্ত্রের শবযাত্রা’র প্রতীকী প্রতিবাদে হোলির সন্ধ্যাতেই মিছিল হয়েছে শহরে।