সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। সঙ্গে তাঁর আগের মন্তব্য নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবি। —ফাইল চিত্র।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজনৈতিক আক্রমণ করতে গিয়ে সোমবার শালীনতার সীমা লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে। অভিষেককে লক্ষ্য করে তাঁর টুইটে একটি বিশেষ শব্দ দলের অন্দরেও তাঁকে সমালোচনার মুখে দাঁড় করিয়েছিল। সোমবারের সেই টুইট নিয়ে সেলিম দুঃখপ্রকাশ করেননি। কিন্তু মঙ্গলবার সাতসকালে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে টুইটের ‘ভুল’ শুধরে নিয়েছেন সেলিম।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেককে কটাক্ষ করতে গিয়ে সোমবার সেলিম লিখেছিলেন, ‘‘অভিযোগ, তিনি (অভিষেক) তাঁর অসাধু সম্পদ রাখার করার জন্য ১৫ জন বিদেশি পতিতার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছিলেন।’’ টুইটে ইংরেজিতে ‘প্রস্টিটিউট’ শব্দটি লিখেছিলেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। তা নিয়ে দলের মহিলা নেতৃত্বের একাংশ সমালোচনায় বিদ্ধ করেছিলেন তাঁকে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বামপন্থীরা ‘প্রস্টিটিউট’, ‘পতিতা’ বা ‘বারবণিতা’ শব্দগুলি ব্যবহার করে না। বরং সেই মহিলাদের সম্মানার্থে তাঁদের ‘যৌনকর্মী’ বলা হয়। যার ইংরেজি ‘সেক্স ওয়ার্কার’।
মঙ্গলবার সকালেই সেলিমের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টার পোস্ট করা হয়েছে। সিপিএমের অনেক নেতা সেটি ‘শেয়ার’ও করেছেন। সেই পোস্টের দ্বিতীয় অংশে লেখা, “১৫ জন বিদেশি যৌনকর্মীর অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাচারে অভিযুক্ত।” সোমবারের টুইটে অভিষেকের ছবি সম্বলিত একটি খবরের লিঙ্ক ‘শেয়ার’ করেছিলেন সেলিম।ঘটনাচক্রে সেটি ছিল আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত খবর। ফেসবুক পোস্টে সে সব নেই। ফলে এটা স্পষ্ট নয় যে, কাকে তিনি নিশানা করেছেন। তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকের মতে, যে হেতু ‘বিতর্কিত’ টুইটের বাংলা তর্জমা করা হয়েছে ফেসবুকে, তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে অভিষেককেই নিশানা করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। পাশাপাশি, কৌশলে পিছুও হটেছেন তিনি।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের ওই টুইট নিয়ে দলের মহিলা নেত্রী কনীনিকা ঘোষ বোস সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘‘আমরা প্রস্টিটিউট (পতিতা) শব্দটা বলি না। আমরা সেক্স ওয়ার্কার (যৌনকর্মী) বলি।’’ একই কথা শোনা গিয়েছিল সিটু নেতা অনাদি সাহুর মুখেও। যুব ও ছাত্র ফ্রন্টের অনেকে এ নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন দলের অভ্যন্তরে। বিভিন্ন হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপেও নানা জনে নানা কথা লিখতে শুরু করেছিলেন।
স্বভাবতই ‘খড়্গহস্ত’ হয়ে ময়দানে নেমেছিল তৃণমূলও। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা টুইটে সোমবার লিখেছিলেন, ‘‘কয়েক বছর আগের কথা। পার্টির কাজ আছে বলে এক নামী নেতা বান্ধবীর সঙ্গে একটি রাজ্যের হোটেলে চলে যান। তাঁর বিমান এবং হোটেলের কাগজ তাঁর বাড়িতে দেন পার্টিরই আর এক নেতা। আমাদেরও দেন। চূড়ান্ত অশান্তি হয়। আমরা সৌজন্যের খাতিরে তখন ছাপিনি। এ বিষয়ে আপনার কিছু জানা আছে মহম্মদ সেলিম?’’ সংশ্লিষ্ট নেতার পরিচিতি স্পষ্ট করেননি কুণাল। তবে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, এক সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছিল। এবং সেলিম গোটা বিষয়টি নিয়ে অবহিত।
সিপিএম সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে সেলিমের সোমবারের টুইটটি ‘ডিলিট’ করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিতর্ক আরও দানা বাঁধতে পারে বুঝে পৃথক কৌশল নেওয়া হয়। মঙ্গলবার সিপিএমের এক নেতার কথায়, ‘‘এতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না।’’ তবে পাশাপাশিই সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, সমাজমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হওয়া উচিত দলীয় নেতৃত্বের।