পুরনো প্রথা মানতে গেলে সেই ‘কোটা-রাজ’! নতুন যুগে ঢুকতে চাইলে তারুণ্যের নীতি। শেষ পর্যন্ত কোন পথে যাবে সিপিএম? দলের নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগেও সিপিএমের অন্দরে এই প্রশ্নে টানাপড়েন তুঙ্গে!
আলিমুদ্দিনে আগামী ২০-২১ মে রাজ্য কমিটির বৈঠক থেকেই তৈরি হবে দলের নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। বিদায়ী ১৭ সদস্যের সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে অমিতাভ বসু এবং শ্যামলী গুপ্ত ইতিমধ্যেই প্রয়াত। গত মার্চে রাজ্য সম্মেলনের সময় গঠিত রাজ্য কমিটিতেই আমন্ত্রিত সদস্যের পর্যায়ে চলে গিয়েছেন প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন ও কলকাতার প্রাক্তন জেলা সম্পাদক রঘুনাথ কুশারী। তাই তাঁদেরও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে ফেরার প্রশ্ন নেই। এখন দলের মধ্যে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কেবল ওই চার জনের বদলে নতুন চার মুখই আনা হবে? নাকি আরও কিছু রদবদল ঘটবে? এবং এই টানাপড়েনে বড়সড় ভাবেই জড়িয়ে পড়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা!
সিপিএম সূত্রের খবর, নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে অশোক ভট্টাচার্য এবং মহিলা মুখ হিসাবে রেখা গোস্বামীর অন্তর্ভুক্তি প্রায় নিশ্চিত। অশোকবাবুকে এ বার রাজ্য নেতৃত্বে জায়গা দেওয়ার ভাবনা আগে থেকেই ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যকান্ত মিশ্রদের। শিলিগুড়ির পুরভোটে অশোকবাবুর সাফল্য সেই সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করেছে। অশোক-রেখা ছা়ড়াও সম্পাদকমণ্ডলীতে সংখ্যালঘু এবং তফসিলি জাতির প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে চান সূর্যবাবুরা। সেই দিক থেকে দলের দুই প্রাক্তন সাংসদ মইনুল হাসান ও রামচন্দ্র ডোমের নাম আলোচনায় আছে। পাশাপাশি দলের একাংশ চায়, অসুস্থ নিরুপমবাবুর জায়গায় বর্ধমানের প্রাক্তন জেলা সম্পাদক অমল হালদারকে সম্পাদকমণ্ডলীতে আনতে। কিন্তু বিতর্ক বাধিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা!
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের যুক্তি, রেখাদেবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাঁকে আলাদা করে ওই জেলার প্রতিনিধি হিসাবে ধরা ঠিক হবে না। প্রয়াত অমিতাভবাবুর জায়গায় বরং নেপালদেব ভট্টাচার্যকে সুযোগ দেওয়া হোক। যিনি গৌতম দেবের অসুস্থতার সময়ে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। গৌতমবাবুর পাশাপাশিই সিটু নেতা নেপালদেববাবুর পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় কমিটির এক বর্যীয়ান সদস্যও। কিন্তু এতে প্রবল আপত্তি দলের অন্য একাংশের! তাদের পাল্টা বক্তব্য, সাম্প্রতিক পুরভোটে উত্তর ২৪ পরগনায় শোচনীয় ফল হয়েছে দলের। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস এবং গা-জোয়ারির যাবতীয় অভিযোগ মেনে নিয়েও বিশেষত ওই জেলার শিল্পাঞ্চলে দলের তরফে ন্যূনতম প্রতিরোধও গড়তে না পারার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি! এই পরিস্থিতিকে সেই জেলার ভারপ্রাপ্ত নেতারই ‘পদোন্নতি’ ঘটলে দলের কর্মী মহলে ভুল বার্তা যাবে।
শুধু এই টানাপড়েনেই আটকে না থেকে রাজ্য কমিটির একাংশ অবশ্য চাইছে, এ বার একটু অন্য ভাবে ভাবা হোক। জেলা বা গণসংগঠনের ‘কোটা’র বাইরে বেরিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের সুযোগ দেওয়া হোক রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতিতেই রাজ্য কমিটির বৈঠক করে কেরল সিপিএম এ বার তাদের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের যথাসম্ভব বাইরে রেখেছে। তাদের যুক্তি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যেরা পদাধিকার বলে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর যে কোনও বৈঠকে যোগ দিতে পারেন। কাজেই তাঁদের জায়গায় অন্যদের সম্পাদকমণ্ডলীতে রাখলে অনেক বেশি মুখকে সুযোগ দেওয়া যায়। এ রাজ্যের সিপিএমের একাংশেরও প্রশ্ন, মৃদুল ঘোষ, নৃপেন চৌধুরী, দীপক দাশগুপ্তের মতো কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সম্পাদকমণ্ডলীতে থাকতেই হবে, তার কী মানে? রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘প্রতি বারই বলা হয়, পরের বার আরও তরুণ মুখ আসবে! সেই বারটা এ বারই আসুক না!’’