ফাইল চিত্র।
এত দিন দোষারোপ চলছিল সভা-সমাবেশে। এ বার একেবারে বিধানসভাতেই খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে পাহাড়ের অচলাবস্থার জন্য দায়ী করলেন সিপিএম বিধায়ক তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রীও পাল্টা অশোকবাবু-সহ সিপিএমকে বললেন, ‘‘পাহাড়ে আপনাদের মতো কিছু দল উস্কানি দিচ্ছে। সিপিএম ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা করছে।’’ তবে এ দিন সিপিএমের বক্তব্যে রুষ্ট হলেও কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের পাহাড় সংক্রান্ত বক্তৃতা শুনে তাঁকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড়ে অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে বিধানসভায় মঙ্গলবার জিটিএ প্রসঙ্গে বিবৃতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরই বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং অশোকবাবু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা বলতে চান। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তখন বাম এবং কংগ্রেসের এক জন করে বিধায়ককে জিটিএ প্রসঙ্গে বলতে দিলে অশোকবাবু অভিযোগ করেন, পাহাড়ে বিশেষ ভাষা আইন থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়-সহ গোটা রাজ্যে স্কুলস্তরে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করায় গোলমাল শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এর জবাবে বলেন, ‘‘নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থ বড়। বিদেশ নীতি নিয়ে আমাদেরও অনেক সময় আপত্তি থাকে। কিন্তু আমরা দেশের স্বার্থে বাইরে কিছু বলি না। সিপিএমের বন্ধু যেটা বললেন, তা ঠিক নয়। কারণ পাহাড়ে ভাষা নিয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তিই জারি হয়নি। সিপিএম ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা কেন করছে?’’ মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমের বিরুদ্ধেই পাহাড়ের অশান্তিতে উস্কানি দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ তোলায় ওয়াক আউট করেন বাম বিধায়করা। তা নিয়ে স্পিকার সভায় বলেন, ‘‘আপনাদের বলতে দিলাম। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরটা তো শুনতে হবে! উত্তর না শুনে চলে যাওয়া বোধহয় রাজনৈতিক সৌজন্য নয়।’’
পাহাড়-সমস্যা নিয়ে এতদিন কংগ্রেসও মুখ্যমন্ত্রীর উপরই দায় চাপিয়েছিলেন। সমস্যা মেটাতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দু’বার দেখা করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কিন্তু কংগ্রেসের সেই অবস্থান থেকে সরে এ দিন বিধানসভায় শঙ্কর মালাকার মমতারই পাশে দাঁড়ালেন। তিনি বলেন, ‘‘কে দোষী, কে নির্দোষ, সেই বিতর্কে যেতে চাই না। পাহাড় পরিস্থিতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যারা যুক্ত, শুধু তাদের উপরেই নয়, সমতলেও এর আঁচ পড়ছে।’’
এই প্রেক্ষিতেই শঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘আগুন নিয়ে যারা খেলা শুরু করেছিল, তাদের খেলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। এখন সুড়সুড়ি না দিয়ে সব রাজনৈতিক দল এবং সরকারকেই সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই বক্তৃতার কিছু ক্ষণ আগে বিধানসভাতেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কথা বলেন শঙ্করবাবু। পাহাড় নিয়ে তাঁর বক্তব্যের পরে মুখ্যমন্ত্রী শঙ্করবাবুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘‘এই বিষয়টা নিয়ে অন্তত রাজনীতি করেননি। ইতিবাচক কথা বলেছেন।’’ আর এই ঘটনাক্রমেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে।
এ দিনই শেষ হয়েছে সিপিএমের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক। সেখানেও পাহাড়ের জটিল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, পাহাড়ের সমস্যা মেটাতে সিপিএম শুরু থেকেই কেন্দ্র-রাজ্য এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু কেউ কর্ণপাত করেনি। এ অবস্থায় কারও অসুবিধা এবং আপত্তি না থাকলে বিরোধী দল হিসাবে তাঁরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে এবং তাঁদের বক্তব্য শুনতে চান।