(বাঁ দিকে) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
আগামী ২২ অগস্ট প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভার আয়োজন করতে চলেছে সিপিএম। কোথায় সেই স্মরণসভা হবে, আগামী সোমবার সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তবে সেই স্মরণসভায় রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডাকা হবে না বলেই জানিয়ে দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রয়াত হয়েছিলেন বুদ্ধদেব। শুক্রবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ বিধানসভা, আলিমুদ্দিন ও দীনেশ মজুমদার ভবন হয়ে জনস্রোতে ভেসে এনআরএস হাসপাতালে পৌঁছয়। সেখানেই তাঁর দেহদান করা হয়। এর পর শনিবার আলিমুদ্দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রয়াত নেতার স্মরণসভার আয়োজন করা হবে। প্রসঙ্গত, ২৩-২৫ অগস্ট নদিয়ার কল্যাণীতে সিপিএমের রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। বুদ্ধদেবের শেষযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন না দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বুদ্ধদেবের প্রয়াণের দিনই, অর্থাৎ ৮ অগস্ট সীতারামের চোখের ছানি অস্ত্রোপচার হয়। রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনে সীতারামের উপস্থিত থাকার কথাই ছিল। সিপিএম সূত্রে খবর, সেই কারণে কল্যাণীর বৈঠক শুরুর আগের দিন বুদ্ধদেবের স্মরণসভা করা হচ্ছে। না হলে ইয়েচুরির সময় পাওয়া মুশকিল। এর পর তাঁর সাংগঠনিক কর্মসূচি রয়েছে কেরলে।
সেই স্মরণসভায় কি রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতাকে আমন্ত্রণ জানানো হবে? এই প্রশ্নের জবাবে সেলিম বলেন, ‘‘সিপিএমকে উৎখাত করতে আরএসএসের বুদ্ধিতে ও পুঁজিপতিদের অর্থে তৃণমূল তৈরি হয়েছিল। তাদের সম্রাজ্ঞীকে কেন সিপিএম ডাকতে যাবে? বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্বপ্ন বাস্তবায়নে যারা কাঁটা হয়েছিল, তাদের কেন ডাকা হবে? এই প্রশ্ন আসাই উচিত নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতার সরকার যদি আলাদা করে বুদ্ধদেবের স্মরণসভার আয়োজন করে, সেখানে প্রাক্তন মন্ত্রী হিসাবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলে কি তিনি যাবেন? সেলিমের জবাব, ‘‘যিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে জেলার কোনও প্রশাসনিক সভায় বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের ডাকেন না, যিনি বিরোধী দলের বিধায়ককে নিজের দলে নিয়ে পিএসির চেয়ারম্যান করেন, সংসদীয় গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্র নিয়মকানুন যিনি মানেন না, তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণসভা করবেন, এ কথা ভাবা যায় না!’’
প্রসঙ্গত, বুদ্ধদেবকে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট দিয়ে বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তাঁর সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সকালে বুদ্ধদেবের দেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভা যাবে। সেখান থেকে যাবে আলিমুদ্দিনে। সেখানে দেহ তিন ঘণ্টা থাকবে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। এর পর দেহ নিয়ে মিছিল করে যাওয়া হবে যুব ফেডারেশনের দফতরে। তার পর সেখান থেকে দেহ নিয়ে এনআরএসে যাওয়া হবে। বিধানসভায় গান স্যালুট দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের তরফে বলা হলেও দস্তুর হল, গান স্যালুটের পর আর কোনও কর্মসূচি রাখা যায় না। সিপিএম নেতৃত্বের ব্যাখ্যা ছিল, বিধানসভা থেকে দেহ আলিমুদ্দিনে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। যাত্রা শেষ হওয়ার কথা ছিল এনআরএস হাসপাতালে। সেখানে তো কোনও ভাবে গান স্যালুট দেওয়া যায় না। সেই কারণেই মমতার প্রস্তাব বাতিল করা হয়।