ছবি: সংগৃহীত।
লোকসভা নির্বাচনে বেনজির বিপর্যয়ের পরেই নেতৃত্বে রদবদলের কথা উঠেছিল সিপিএমে। চার বছর আগের প্লেনামের সিদ্ধান্ত মেনে সাংগঠনিক ত্রুটি চিহ্নিত করে তারুণ্যে জোর দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। শেষ পর্যন্ত দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকেই রদবদলের প্রক্রিয়া শুরু করল সিপিএম। দায়িত্ব থেকে সরে গেলেন গৌতম দেব, মানব মুখোপাধ্যায়-সহ চার নেতা। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং রাজ্য কমিটিতে আমদানি হল আরও তরুণ রক্তের।
দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির উপস্থিতিতেই বৃহস্পতিবার থেকে আলিমুদ্দিনে শুরু হয়েছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে ওঠার শতবর্ষ পূর্তির সূচনার দিনেই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য স্তর থেকে সাংগঠনিক রদবদলের কাজ শুরু করা হল। এর পরে জেলা, এরিয়া ও লোকাল কমিটি স্তরেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে। বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, দীপক দাশগুপ্ত, নৃপেন চৌধুরী, গৌতম ও মানববাবু রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তাঁদের জায়গায় দুই আমন্ত্রিত সদস্য অনাদি সাহু ও সুমিত দে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর পূর্ণ সদস্য হচ্ছেন। কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দুই জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার ও শমীক লাহিড়ী এবং উত্তর ২৪ পরগনার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পলাশ দাসকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর স্থায়ী আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে।
কঠিন সময়ে দলের রাজ্য কমিটিতেও এক ঝাঁক নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। কমিটির শূন্য থাকা একটি জায়গায় আনা হয়েছে নানুরের বিধায়ক শ্যামলী প্রধানকে। তফসিলি মহিলা মুখকে গুরুত্ব দেওয়ার বার্তা যে সিদ্ধান্তে স্পষ্ট বলে দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা। তারই পাশাপাশি আমন্ত্রিত সদস্য করে রাজ্য কমিটিতে আনা হচ্ছে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, এসএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য ও রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর রহমানকে। জায়গা পেয়েছেন হাওড়া ও বর্ধমানের কৃষক সংগঠন থেকে দুই নেতা পরেশ পাল ও সৈয়দ হোসেন, নদিয়া থেকে প্রাক্তন সাংসদ অলকেশ দাস এবং রাজ্য-কেন্দ্রের (আলিমুদ্দিন) সর্বানীপ্রসাদ সাঁতরা।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সংগঠনে কিছু রদবদল এনে একটা ঝাঁকুনি দেওয়া হল। যাঁরা দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না, তাঁদের সরে যেতে হবে। তার জন্য সম্মেলন-পর্বের জন্য অপেক্ষার দরকার নেই।’’ রাস্তায় নেমে আন্দোলনে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই যুব, ছাত্র ও কৃষক সংগঠন থেকে মুখ তুলে আনা হল রাজ্য কমিটিতে। একসঙ্গে এত জন যুব ও ছাত্র নেতার রাজ্য কমিটিতে আসার নজির সাম্প্রতিক কালে বিরল। উৎসবের পরেই সিটুর ডাকা চিত্তরঞ্জন থেকে কলকাতা ‘লং মার্চ’-এ সব গণসংগঠনকে সর্বশক্তি দিয়ে অংশগ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন সূর্যবাবু।