মহম্মদ সেলিম। —ফাইল চিত্র।
পার্টি কংগ্রেসের প্রাক্কালে সিপিএমের নিচুতলা থেকে সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই শাখা স্তরের সম্মেলন প্রক্রিয়া প্রায় শেষের মুখে। পুজো মিটলেই এরিয়া কমিটিগুলির সম্মেলন শুরু হবে। তার আগে বুধবার এক দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠক করে সে বিষয়েই বেশ কিছু বিধি নির্ধারিত করল রাজ্য সিপিএম। সূত্রের খবর, এরিয়া কমিটি স্তরে তরুণ প্রজন্মের নেতা-নেত্রীদের আধিক্য বৃদ্ধি করতেই ভোটাভুটি এবং বয়সবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছুটা কড়াকড়িই করল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সিপিএম সূত্রে খবর, প্রারম্ভিক ভাষণে রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জেলাগুলির উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, দলে কম বয়সিদের নেতৃত্ব স্তরে তুলে আনতে গেলে বয়সবিধি কঠোর ভাবে মানতে হবে। এ বিষয়ে কোনও শিথিলতা দেখানো যাবে না। ইতিমধ্যেই সিপিএম পার্টি চিঠি প্রকাশ করে সম্মেলন সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে। কিন্তু তার পরেও আরও কিছু বিষয় স্পষ্ট করতে চায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সিপিএম ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, এরিয়া স্তরে কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা যা হবে তার ৩০ শতাংশ হতে হবে ৪০ বছরের মধ্যে (এঁদের মধ্যে এক জনের বয়স হতে হবে অনূর্ধ্ব ৩১)। আর ২০ শতাংশের বয়স হতে হবে ৫০ বছরের মধ্যে। অর্থাৎ সোজা কথায় ৫০ শতাংশের বয়স হতে হবে ৫০ বছরের মধ্যে। এই বিধিকে কোনও ভাবেই লঙ্ঘন করা যাবে না বলে ঠিক করেছে রাজ্য কমিটি। ধরা যাক কোনও এরিয়া কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ২১। সেক্ষেত্রে ১১ জনের বয়স হতে হবে ৫০-এর নীচে। আবার ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে কেউ এরিয়া কমিটিতে থাকতে পারবেন না।
রাজ্য কমিটির মনোভাব বলতে গিয়ে এক নেতা বলেন, ‘‘আমরা চাই সর্বত্র ঐক্যমতের ভিত্তিতেই কমিটি গঠন হোক। কিন্তু কোথাও যদি তা না হয়, একান্তই ভোটাভুটিতে গড়ায় সম্মেলন, তা হলে বিধি মেনেই ভোটাভুটি করতে হবে।’’ এরিয়া কমিটি যদি ২১ জনের হয় তা হলে প্রথমে বিদায়ী কমিটি সেই তালিকা পেশ করবে। পাল্টা কোনও নাম থাকলে তা হলে কক্ষ থেকে জমা দিতে হবে। কিন্তু ভোট দেওয়ার সময়ে কেউ ১০ জন বা ১৫ জনকে ভোট দিয়ে ব্যালট জমা দিতে পারবেন না। তাঁকে পছন্দ মতো ২১ জনকেই ভোট দিতে হবে। না হলে সেই ব্যালট বাতিল বলে গণ্য হবে। আবার শুধু এক ধার থেকে ২১ জনকেই ভোট দিলে হবে না। বয়স বিধি মেনেই ভোট দিতে হবে। না হলে সেই ব্যালটও গোনা হবে না। সিপিএম নেতাদের অনেকেরই আশঙ্কা রয়েছে, এ বার বহু জায়গায় এরিয়া স্তরে ভোটাভুটি হবে। ইতিমধ্যে তার সলতে পাকানোও শুরু হয়ে গিয়েছে। এক নেতা রসিকতা করে বলেন, ‘‘এ বার সম্মেলনে সবার জন্ম সংশাপত্রের দিস্তা নিয়ে বসতে হবে।’’ সিপিএম ইতিমধ্যেই নথিতে লিখেছে, যে স্তরে বিদায়ী কমিটির গড় বয়স যা, তা এ বার চার বছর হ্রাস করতে হবে। তবে, সর্বত্র তরুণ অংশের ‘পরিণত’ নেতৃত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বুধবারের রাজ্য কমিটির বৈঠকে আরজি কর আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে রিপোর্ট রাখা হয়েছে জেলাগুলির তরফে। রাজ্য কমিটির তরফে বলা হয়েছে, যে ভাবে নাগরিক আন্দোলন চলছে, তার সঙ্গে দলকে ঝান্ডাহীন হয়ে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। বৃহস্পতিবার রাজ্য সিপিএমের উদ্যোগে প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে দলের কলকাতা জেলা দফতরের প্রেক্ষাগৃহে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রকাশ কারাট।