—প্রতীকী ছবি।
ধাক্কাটা এসেছিল ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলন পর্বেই। নন্দীগ্রাম, খেজুরি-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় সিপিএমের একের পর এক কার্যালয় বন্ধের সেই শুরু। তারপর বহু ভোট গিয়েছে আর রক্তক্ষরণ বেড়েছে বামেদের।
নন্দীগ্রামের সেই জেলাতেই এ বার উলট পুরাণ। দীর্ঘ চার বছর তালাবন্ধ থাকার পরে পটাশপুর ১ ব্লকে সিপিএমের সিংদা জোনাল অফিস কার্যালয় খুলল। এলাকায় সিপিএমের প্রভাব সে ভাবে বেড়েছে বলে গত পঞ্চায়েত ভোটেও প্রমাণ মেলেনি। তাই এই কার্যালয় খোলার পিছনে অন্য সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের পরেই একদা শক্ত ঘাঁটিতে পটাশপুরে ‘ঘরছাড়া’ হয় সিপিএম। তালা পড়ে কার্যালয়ে। সিংদা বাজার থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে পাশের পটাশপুর–২ ব্লকে এক দলীয় নেতার বাড়ি ভাড়া নিয়ে শুরু হয় সিংদা জোনাল কার্যালয়ের কাজকর্ম। গত প্রায় ৪ বছর এ ভাবেই চলেছে। অস্থায়ী ওই কার্যালয় থেকেই পরবর্তী ভোটগুলিতে কাজকর্ম পরিচলনা করেছেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। তবে গত পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্যন্তও সিংদায় দলীয় অফিস খোলার চেষ্টা করেও সফল হয়নি বামেরা। অবশেষে নভেম্বর বিপ্লব দিবস পালনকে সামনে রেখে গত ৭ নভেম্বর সিংদার বন্ধ কার্যালয় খোলা হয়েছে। সাংগঠনিক কাঠামো বদলে যাওয়ায় এখন তা সিপিএমের এরিয়া অফিস হয়েছে। তালা খোলার পরে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে পতাকা তোলা হয়, স্থানীয় বাজারে মিছিলও করেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা। ওই একই দিনে পটাশপুরের মংলামাড়ো বাজারে পুরনো লোকাল কমিটির অফিসও খোলা হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। এটি এখন শাখা অফিস হিসেবে কাজ করছে।
কোন পরিস্থিতিতে এই সুদিন এল?
সিপিএমের পটাশপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক অনন্ত পান বলেন, ‘‘ব্লকে দলের দু’শোর বেশি সদস্য রয়েছে। বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এতদিন সেই সদস্যরা প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ফলে মিছিল এবং সভার মতো প্রকাশ্য কর্মসূচি নেওয়া যায়নি। এখন পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। সদস্য-সমর্থকরাও সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে আসছে। তাইএতদিন পরে দলীয় কার্যালয় খোলা গিয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে অবশ্য খবর, এলাকায় দ্বন্দ্বে জেরবার তৃণমূল। সেই সুযোগে সংগঠন বাড়াচ্ছে বিজেপি। পটাশপুর উত্তর ও দক্ষিণ দু’টি কার্যালয়ও খুলেছে গেরুয়া শিবির। পরিসংখ্যান বলছে, পটাশপুর ১ ব্লকের ১২৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে এ বার ৪টিতে জিতেছে বিজেপি, আর সামান্য ব্যবধানে দু’টি আসনে জিতেছে বামেরা। সিংহভাগ আসনই গিয়েছে তৃণমূলের দখলে। এমন পরিস্থিতিতে বিজেপি-র কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপন মাইতির ব্যাখ্যা, ‘‘ওই এলাকায় সিপিএমের কোনও অস্তিত্ব নেই। পঞ্চায়েত ভোটে আমরাই প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছি। তাতে ভয় পেয়ে তৃণমূলই এখন সিপিএমকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে।’’
এত দিন পরে দলীয় কার্যালয় খোলার পিছনে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলের কথা মানছেন সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহিও। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে দলের একাংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে। ফলে, এলাকায় রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল কিছুটা দুর্বল হয়েছে। তাই ফের বন্ধ থাকা কার্যালয় খোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
কী বলছে শাসক দল?
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা পটাশপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তাপস মাজির বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘ দিনের অত্যাচারের ফল হিসেবে জনরোষেই সিপিএম কার্যালয় খুলতে পারেনি। ওরা যে জনবিছিন্ন হয়ে গিয়েছে, তা নির্বাচনেই বারবার প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এখন সিপিএমের একাংশ বিজেপিতে গিয়ে অস্তিত্বরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, এলাকায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে বলেই সিপিএম কার্যালয় খুলতে পেরেছে।