পরের পর ভোটে বিপর্যয় চলছে। সদ্যসমাপ্ত সমতলের তিনটি পুরসভার ভোটেও মুখ দেখানোর মতো জোটেনি। গোটা বাম রাজনীতির ডেথ সার্টিফিকেট লিখে ফেলেছে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশই! এই অবস্থায় নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে মরিয়া বামেরা যাচ্ছে নবান্ন অভিযানে। পাঁচ জায়গা থেকে আজ, সোমবার বামেদের নবান্নমুখী মিছিলে দুপুর থেকেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে মধ্য কলকাতা ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা।
মোট ১৮ দফা দাবিতে নবান্ন অভিযানের মূল ডাক ১১টি বামপন্থী কৃষক সংগঠনের। তার মধ্যে কৃষকদের জন্য ফসলের ন্যায্য দাম, সাধারণ নাগরিকের জন্য ডিজিটাল রেশন কার্ডের পাশাপাশি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবিও আছে। কৃষক সভার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরও নানা বামপন্থী সংগঠন কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছে। ‘বাংলা বিপন্ন, চলো নবান্ন’— এই স্লোগান দিয়ে কলকাতা ও হাওড়ার রাস্তায় সারা রাজ্য থেকে লাখতিনেক মানুষকে জড়ো করার পরিকল্পনা রয়েছে বামেদের। পুলিশ এই বিপুল বাহিনীকে কী ভাবে সামলাবে, তার উপরেই কর্মসূচির ধরন নির্ভর করছে বলে বাম নেতারা জানাচ্ছেন।
বামেদের দাবিপত্র নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য শহরে থাকছেন না। প্রায় গোটা রাজ্য প্রশানকে নিয়ে তিনি চলে গিয়েছেন বীরভূম। দু’বছর আগে বামেদের নবান্ন অভিযান রক্তাক্ত হওয়ার দিনও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দিল্লিতে। এ বার বীরভূমের জেলা সফর পূর্বনির্ধারিত ছিল না। সেই অভিযোগ করেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে বিরোধীদের মর্যাদা দিতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বামেদের তো দেখাই যাচ্ছে না! কিন্তু যে দিন লাল ঝান্ডায় রাস্তা ভাসবে, সে দিন উনি দেখবেন না বলে জেলায় চলে গেলেন। আমি দেখিনি, অতএব ওরা বিরোধী নয়— এটা স্বৈরাচারের একটা লক্ষণ।’’ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আজ কলকাতায় থাকবেন। তিনি বলেন, ‘‘বামেরা তো বিক্ষোভ করবে বলেছে। দাবিপত্র দেবে বলেনি। যদি দিতে চায়, আমি বিধানসভায় থাকব।’’
বাম কৃষক সংগঠনগুলির তরফে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষ রবিবার অভিযোগ করেছেন, ‘‘নবান্ন অভিযান আটকাতে পুলিশের পোশাক পরিয়ে শাসক দলের কর্মীদের রাস্তায় রাখা হচ্ছে। আটকানো হলে রাস্তা অবরোধ হবে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। কিন্তু শাসক দল যদি প্ররোচনা দেয়, তার দায় তাদের।’’ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, পিটিএস (রেস কোর্স), খিদিরপুর মাজার (হেস্টিংস), হাওড়া রেল মিউজিয়াম ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সাঁতরাগাছি রেল স্টেশন— এই পাঁচ জায়গায় থেকে আজ জমায়েত করে মিছিল শুরু হবে বামেদের। মদনবাবু জানান, নিবেদিতা সেতু খালি রাখা হবে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য। ট্রেন বা বিমান ধরার জন্য হাতে সময় নিয়ে বেরোনোর আর্জি জানান তিনি।