সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের জেরে রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করল সিপিএম। শুধু তাঁকে সতর্ক করাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বার থেকে দলের নেতা-কর্মীদের কর্মকাণ্ডে রাশ টানতে সিপিএমের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে রূপরেখাও তৈরি করা হচ্ছে। ঋতব্রত অবশ্য দলের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারকারীর চাকরিতে নিয়োগকারী সংস্থাকে চিঠি লেখার জন্য। তাঁর ওই কাজের জন্য সতর্ক করা হলেও দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বৃহস্পতিবার আর এক সাংসদ মহম্মদ সেলিমকে পাশে নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, ইলেকট্রনিক সামগ্রী (গ্যাজেট) কেনার জন্য সংসদ ৩ লক্ষ টাকা করে দেয়। সেই তহবিল কাজে লাগিয়ে কোনও সাংসদ আধুনিক স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচ নিতেই পারেন।
আলিমুদ্দিনে দু’দিনের বৈঠক শেষ এ দিন রাজ্য সিপিএমের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিতর্ককে কেন্দ্র করে রাজ্য কমিটির সদস্য ও সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণকে সমালোচনা করে তাঁকে প্রকাশ্য সর্তক করেছে রাজ্য কমিটি’। বৈঠকের শেষার্ধে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সাংসদকে ভর্ৎসনা করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, প্রতিহিংসামূলক আচরণ কমিউনিস্ট পার্টিতে সমথর্নযোগ্য নয়। সকলে এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত কি না জানতে চাওয়া হলে দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় শুধু মতদানে বিরত ছিলেন। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সামনে হাজির হয়ে বুধবারই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দিয়েছিলেন ঋতব্রত। দলেরই একাংশ কী ভাবে রাজ্য নেতৃত্বকে হেয় করার উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছে, তার তথ্যপ্রমাণও জমা দিয়েছিলেন।
দলের মধ্যে আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি থাকলেও স্বয়ং ইয়েচুরি বা রাজ্য স্তরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সূর্যবাবু, গৌতম দেবেরা ঋতব্রতকে সতর্ক করারই পক্ষে ছিলেন। ইয়েচুরি যেমন এ দিন ব্যাখ্যা করেছেন, ‘‘কারও মতামত হোক বা জীবনযাপন— কোনও প্রশ্ন, অভিযোগ থাকলে দলের সদস্যেরা শুধু দলীয় মঞ্চেই জানাবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দলীয় সদস্যেরা এ সব চর্চা করতে পারেন না।’’ ইয়েচুরিরা বলছেন, দলের কোনও সিদ্ধান্ত নেতা-কর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করতেই পারেন। কিন্তু যে বিষয়ে দল কোনও অবস্থান নেয়নি বা যেখানে দলের কোনও ভূমিকা নেই, সেখানে দলের সদস্যেরা যেমন খুশি চলতে পারবেন না। এই লক্ষ্ণণরেখা টেনে দিয়েই দলীয় কর্মীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে রূপরেখা তৈরি হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কর্মীদের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ দূর করতে কী করণীয়, তা নিয়ে রাজ্য কমিটিতে সরব হয়েছেন মানবেশ চৌধুরী, রমা বিশ্বাসেরা।