উত্তর দিনাজপুরে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও আলি ইমরান রাম্জ (ভিক্টর)।
পদযাত্রার উদ্দেশ্য ও আহ্বানকে সমর্থন জানিয়েও প্রদেশ কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় শেষ পর্যন্ত শামিল হচ্ছে না সিপিএম।
কলকাতা-সহ অন্যত্র আগামী ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় কার্সিয়াঙে সে দিন প্রদেশ কংগ্রেসের পদযাত্রার সমাপ্তি-পর্বে তাদের দলের প্রতিনিধি পাঠানো যাচ্ছে না বলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিতে চলেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তবে পদযাত্রাকে সমর্থনের কথা ফের সেখানে উল্লেখ করা হবে বলেই সিপিএম সূত্রের খবর। কার্সিয়াঙে সিপিএমের প্রতিনিধি না পাঠানোর পাশাপাশিই মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি কেন্দ্রের বিধানসভা উপনির্বাচনেও বাম ও কংগ্রেস আলাদা লড়বে, এখনও পর্যন্ত এমনই ঠিক আছে। তার ফলে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাম ও কংগ্রেসের ফের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা আপাতত বাস্তবায়িত হচ্ছে না। প্রদেশ কংগ্রেসও পঞ্চায়েতে যথাসম্ভব আসনে একা লড়বে বলেই প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছে।
সর্বভারতীয় স্তরে রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র অঙ্গ হিসেবে এ রাজ্যে কংগ্রেসের সাগর থেকে পাহাড় পদযাত্রা বুধবার পৌঁছেছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে। ওই যাত্রার সমাপ্তি-পর্বে ২৩ তারিখ কার্সিয়াঙে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কিন্তু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর আলোচনায় ঠিক হয়েছে, গোটা রাজ্য পেরিয়ে যাওয়ার পরে কার্সিয়াঙেও আর দলের প্রতিনিধি পাঠানো হবে না। কলকাতা এবং আশেপাশের এলাকায় বামপন্থী কিছু বিশিষ্ট জন যেমন কংগ্রেসের পদযাত্রায় শামিল হয়েছিলেন, পাহাড়েও তেমন করা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। আর চিঠি পাঠিয়ে কংগ্রেসকে পদযাত্রার বিষয়ের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেওয়া হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘নেতাজির জন্মদিনে আমাদের সকলেরই পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি রয়েছে। তা ছাড়া, সর্বভারতীয় স্তরে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’কে সমর্থন করলেও সেখানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও নেননি। একটা রাজ্যে অন্যথা করা সমস্যারও বটে।’’
কাশ্মীরে রাহুলের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় থাকবেন সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা ও সাংসদ বিনয় বিশ্বম। কিন্তু অধীরের আমন্ত্রণে সাড়া দিচ্ছে না এ রাজ্যের সিপিআই। দলের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আমরাও চিঠি দিয়ে জানাচ্ছি, ২৩ তারিখ নেতাজি সংক্রান্ত কর্মসূচি রয়েছে বামফ্রন্টের সকলের। তা ছাড়া, শুধু একটা চিঠি পাঠানো ছাড়া কংগ্রেসের তরফে কেউ কোনও যোগাযোগ করেননি। বিষয়টার মধ্যে খুব আন্তরিকতা আছে বলে মনে হচ্ছে না।’’ বাম শরিক আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকও কার্সিয়াঙে যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষিতে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যকে প্রসারিত করতে চেয়ে আমরা ওঁদের আমন্ত্রণ করেছি। হয়তো ২৩ তারিখ বলে অসুবিধা হল। তবে ওঁদের সদিচ্ছা নিয়ে সংশয় নেই, আমরাও আমাদের সদিচ্ছা ব্যক্ত করেছি। আশা করি, ভবিষ্যতে দু’পক্ষ সমন্বয় করেই চলবে।’’
নেপাল মাহাতোর নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সংক্রান্ত কমিটি অবশ্য তাদের প্রথম বৈঠকে ঠিক করেছে, যথাসম্ভব আসনে দল একাই লড়বে। যেখানে কংগ্রেস দুর্বল, সেখানে কী করণীয়, তা নিয়ে পরে আলোচনা হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কলকাতায় পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলনও করতে চায় তারা। সব জেলার প্রতিনিধি ছাড়াও পঞ্চায়েতের বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রিত ছিলেন সৌম্য আইচ রায় ও কৌস্তুভ বাগচী।