—ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটের সময় তৃণমূলকে ফাঁসাতে নিজের বাড়িতেই বোমা মারার অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের প্রার্থী-দম্পতির বিরুদ্ধে। তা নিয়ে তখন তোলপাড় পড়ে যায় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে। সেই প্রার্থী দম্পতি সুশান্ত মণ্ডল ও দেবিকা দেবনাথ সিপিএমের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার উগরে দিয়ে চতুর্থ দফার লোকসভা ভোটের আগে যোগদান করলেন বিজেপিতে। তাঁরা জানান, সোমবার ভোটের দিন জামালপুরে দোলরডাঙার এলাকার বুথে সক্রিয় থাকবেন। তাঁদের কথায়, ‘‘কাঁটায় কাঁটায় টক্কর হবে।’’
জামালপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের ১৪১ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন সুশান্ত। স্ত্রী দেবিকা একই পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন। ওই পঞ্চায়েতের অন্তর্গত উত্তর মোহনপুর গ্রামে তাঁদের বাড়ি। এই দম্পতি প্রার্থীকে নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারেও ঝড় তুলে ছিলেন সিপিএমের নেতা ও কর্মীরা। পঞ্চায়েত ভোটের সময় দেবিকা ও সুশান্তকে লাল ঝান্ডা কাঁধে নিয়ে সিপিএমের মিটিং মিছিলের প্রথম সারিতেই দেখা যেত। সেই প্রার্থী দম্পতির বাড়িতে ২০২৩ সালের ২৫ জুন ভোরে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বাড়িতে বোমা ছুড়ে মারার ঘটনা স্থানীর তৃণমূল কর্মীরা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সুশান্ত ও দেবিকা সরব হন। সিপিএম জামালপুর ১ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র এলাকার দুই তৃণমূল কর্মী তারক বিশ্বাস ও দেবব্রত সেনগুপ্ত ওরফে দেবুকে দুষ্কৃতী আখ্যা দিয়ে বোমা মারার ঘটনায় দায়ী করে পার্টির প্যাডে জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে। তারই মধ্যে পঞ্চায়েত ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ভোটে সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি পরাজিত হন। এ দিকে ভোট মিটতেই সিপিএমের প্রার্থী দম্পতির বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে পুলিশ দাবি করে, পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন ওই প্রার্থী দম্পতি। তাই এলাকার তৃণমূল কর্মীদের ফাঁসাতে দম্পতি তাঁদের পার্টির লোককে দিয়েই নিজেদের বাড়িতে বোমা ছোড়ায়। বোমা মারার অভিযোগে পুলিশ সুশান্তের সহযোগী স্থানীয় সিপিএম কর্মী রাম সরকারকে গ্রেফতার করে। এর পরেই উত্তর মোহনপুরের বাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যান দম্পতি সুশান্ত ও দেবিকা। পরে অনেক খোঁজ করে পুলিশ উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলা থানা এলাকা থেকে সুশান্তকে গ্রেফতার কর। সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি রাজ্য সরকারের ‘গতিধারা’ প্রকল্পের যে গাড়িটি ব্যবহার করতেন, সেটিকে বাজেয়াপ্তও করে পুলিশ। পুলিশ দাবি করে, ওই গাড়িতে করেই নদীয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা থেকে বোমা আনা হয়েছিল। সুশান্ত ও রামকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করে আরো বোমা ও আগ্নেআস্ত্র উদ্ধার হওয়ারও দাবিও ওই সময় করে পুলিশ। বেশ কিছু দিন জেল খাটার পর সুশান্ত ও রাম এখন জামিনে মুক্ত ।
তবে সুশান্ত ও তাঁর স্ত্রী দেবিকা এখন আর সিপিএমে নেই। সিপিএমে মোহভঙ্গ হওয়ায় রবিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁরা যোগদান করেন বিজেপি দলে। সিপিএমে মোহভঙ্গ কেন ? এর উত্তরে সুশান্ত মণ্ডল ও দেবিকা বলেন, “সিপিএমের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে আমরা লড়াইয়ে নেমেছিলাম। পঞ্চায়েত ভোটের কিছু দিন আগে আমাদের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আমাদেরকেই দায়ী করে। আমরাই নাকি আমাদের বাড়িতে বোমা ছুড়েছি। এর জন্যে আমরা এনআইএ তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছি। কিন্তু সব থেকে দুঃখের বিষয়, আমাদের এই দুঃসময়ে সিপিএমের কোনও নেতা পাশে দাঁড়ায়নি। তাই সিপিএমের সঙ্গ ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেছি। এ বার বিজেপির হয়েই লড়াই আন্দোলন করব।’’ যদিও সিপিএমের জামালপুর ১ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন, “আমাদের দল সুশান্ত ও দেবিকার পাশে দাঁড়ায়নি, এই অভিযোগ সত্য নয়। আমরা সব রকম ভাবে ওদের পাশ দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিজেপিতে যাওয়ার জন্যে একটা অজুহাত তো দেখাতে হবে, সেটাই ওরা এখন করছে।’’
জেলা বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল সরকারের রাজত্বে পুলিশের করা সব মামলা সত্য, এমনটা ভাবার কিছু নেই। আইন আইনের পথে চলবে। দেবিকা দেবনাথ ও সুশান্ত মণ্ডল বিজেপিতে যোগদান করছেন। আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। তারা সোমবার ভোটের দিন বিজেপির হয়েই ময়দানে নামবেন।’’ আর জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন, “দুর্নীতিগ্রস্ত, দুষ্কৃতী ও অপরাধীদের মিলন ক্ষেত্র হল বিজেপি দল। সেটা বুঝেই যোগ্য দম্পতি যোগ্য দলেই আস্তানা নিয়েছেন। আর যা বাম, তাই তো রাম! এতে আর আশ্চর্যের কী আছে!’’