বাম ও কংগ্রেসের টিকিটে জেতা জনপ্রতিনিধিদের দলবদল চলছেই। বাঁকুড়ায় কংগ্রেসের দু’জন বিধায়ক এবং আরএসপি-র এক বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন। এ বার সেই ধারা দেখা গেল পুরসভাতেও। দলের প্রতি ‘অভিমানে’ কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দিতে পদত্যাগপত্র পেশ করেও শেষ পর্যন্ত তা প্রত্যাহার করে তৃণমূলে যোগ দিলেন বাঁকুড়া পুরসভার সিপিএমের টিকিটে জেতা এক কাউন্সিলর।
শুক্রবার বিকেলে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে দলের জেলা সভাপতি তথা ওন্দার বিধায়ক অরূপ খান, বাঁকুড়ার বিধায়ক শম্পা দরিপা ও বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত, উপ-পুরপ্রধান দিলীপ অগ্রবালের উপস্থিতিতে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর অনন্ত গড়াই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন। অরূপবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নে অনুপ্রাণিত হয়েই তৃণমূলে যোগ দিলেন অনন্ত।” একই সুরে অনন্তবাবুও বলেন, “রাজ্যের উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল হতেই দল পরিবর্তন করলাম।”
অনন্তবাবুর দলত্যাগ করাকে কেন্দ্র করে দিনভর নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, এ দিন সকালে অনন্তবাবু বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে নিজের কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে চিঠি জমা দেন। সূত্রের খবর, ঘটনার কথা কানে আসতেই পুরপ্রধান অনন্তবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে ইস্তফাপত্র জমা দিতে নিষেধ করেন। পরিবর্তে তাঁকে তৃণমূলে যোগ দিতে বলেন। এরপর পুরপ্রধান নিজে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়ে কথা বলে অনন্তবাবুর ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করান।
মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা বলেন, “অনন্তবাবু সকালে কাউন্সিলর পদে ইস্তফাপত্র জমা দিয়ে গিয়েছিলেন। বিকেলে এসে ওই ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করেন।” যদিও তৃণমূলে যোগদানের পর থেকেই অনন্তবাবু কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফাপত্র দেওয়ার কথা অস্বীকার করছেন। পুরপ্রধানেরও দাবি, ওই কাউন্সিলর ইস্তফাপত্র দেননি। তিনি বলেন, “অনন্ত কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দেননি। তিনি দল পরিবর্তনের নিয়ম জানতে মহকুমাশাসকের দফতরে গিয়েছিলেন।” অনন্তবাবুও বলেন, “আমি কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দিতে মহকুমাশাসকের দফতরে যাইনি।”গত পুরনির্বাচনে বাঁকুড়া পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জেলার অন্যতম প্রবীণ তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ ওরফে তারা কুণ্ডুকে ৪৮ ভোটে পরাজিত করেছিলেন অনন্তবাবু। নির্বাচনে শহরের ২৪টি আসনের মধ্যে ১২টি আসন জিতেছিল তৃণমূল। বামফ্রন্ট পাঁচটি, বিজেপি দু’টি, নির্দল চারটি ও কংগ্রেস একটি আসন পেয়েছিল। ভোটের পরপরই তিন নির্দল কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় শাসক দলের আসন বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৫। অনন্তবাবু এ দিন তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় সেই আসন বেড়ে দাঁড়ালো ১৬।
কেন দল ছাড়লেন? অনন্তবাবুর দাবি, “সিপিএমে থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করা যাচ্ছিল না। আমার উপর অনৈতিক কাজ করার চাপ দিচ্ছিলেন দলের কর্মীরা।” ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রতীপ মুখোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “অভিযোগ ঠিক নয়। লোভ ও টোপের কাছে আত্মসমর্পন করল অনন্ত। কাউন্সিলর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ওর যাওয়া উচিত ছিল।” মহাপ্রসাদবাবু অবশ্য অনন্তবাবুর প্রশংসা করে বলেন, “তাঁর ভাবমূর্তি খুবই স্বচ্ছ্ব, বয়সও খুব কম। আমি নিশ্চিত তিনি আরও ভাল কাজ করবেন।”