রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা সময়ে অভিযোগ জানাতে রাজভবনে যেতে হয় তাঁদের। কিন্তু রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘রাজনৈতিক আক্রমণে’ নেমে পড়েছেন, তাকে একেবারেই সমর্থন করছেন না বিরোধী দল সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। স্বয়ং রাজ্যপালকেই তাঁরা এই ভিন্ন মতের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতি, লকডাউন এবং তারই মধ্যে পড়েছে বাংলা নববর্ষ, শুরু হয়েছে রমজানও। এই অবসরে কুশল সংবাদ নিতে বিরোধী শিবিরের নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন রাজ্যপাল ধনখড়। পরিস্থিতি যে যথেষ্ট উদ্বেগজনক, রাজ্যপালের সঙ্গে সেই আলোচনা হয়েছে বিরোধী নেতাদের। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা রাজ্যপালের চিঠির প্রসঙ্গ এনে তীব্র অসন্তোষ জানিয়ে বিরোধী নেতারা তাঁকে বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু তোষণে’র রাজনৈতিক অভিযোগ রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের মুখে মানায় না। সংবিধান নির্দিষ্ট ভূমিকায় রাজ্যপাল অবশ্যই সরকারের ত্রুটি ধরাতে পারেন, আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক সুর রাজ্যপালের পদমর্যাদার সঙ্গে বেমানান, এই মনোভাবই বুঝিয়ে দিয়েছেন সিপিএম ও কংগ্রেস নেতারা। তবে ঘরোয়া এই আলাপচারিতা প্রসঙ্গে রাজভবন বা বিরোধী শিবির, কোনও তরফেই কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি।
রাজ্যপালের ডাকে রাজভবনে আলোচনায় গিয়ে এর আগেই বাম ও কংগ্রেস নেতারা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, বিরোধী শিবিরে থাকলেও রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের যে কোনও সংঘাতে তাঁরা অংশীদার হতে যাবেন না। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ‘যুক্তিগ্রাহ্য’ কারণ থাকলে সেটাই তাঁরা বলবেন। এ বারের আলাপচারিতায় সেই সুরেই তাঁরা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী ‘সংখ্যালঘু তোষণ’ করছেন— এই অভিযোগ বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দল করতে পারে। কিন্তু রাজ্যপাল এ সব বলেন কী ভাবে! এতে সমাজেও ভুল বার্তা গিয়েছে। রেশনে গোলমালের অভিযোগ রাজ্যপালও তুলে ধরায় বিষয়টি সামনে এসেছে বলে বিরোধী নেতারা জানান। তবে একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, রাজ্যে পর্যাপ্ত করোনা পরীক্ষা না হওয়া নিয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু কিট নিয়ে যে ত্রুটি, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ এখন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আসছে, সে কথা না বললে সত্যের ঘোরতর অপলাপ হবে!
আরও পড়ুন: বিরোধীরা ‘শকুন’! মমতার মন্তব্য তুলে ধরে ফের আক্রমণে ধনখড়
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘নীতিগত ভাবে আমরা বহু দিন ধরেই রাজ্যপাল পদ তুলে দেওয়ার পক্ষে। যত দিন ওই পদ আছে, সাংবিধানিক মর্যাদাও তাঁর প্রাপ্য। কিন্তু রাজ্যপালের সাংবিধানিক দায়িত্ব আর রাজনীতির সুরের মধ্যে পার্থক্য ভুলে গেলে কী করে চলবে!’’ প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার মতে, ‘‘দ্য গভর্নর শুড স্পিক ইন কুইন্স ল্যাঙ্গোয়েজ! নিজের মর্যাদা নিজেকেই আগে রক্ষা করতে হবে।’’
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ভারপ্রাপ্ত?