উঠতি মুখ সামাল দিতেই কি নাজেহাল সিপিএম

ব্রতীন সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ, জগমতী সাঙ্গওয়ান বা সদ্য ঋতব্রতের বহিষ্কারের ঘটনাই তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে চলার ক্ষেত্রে সিপিএমের ব্যর্থতার প্রশ্ন আরও বেশি করে সামনে এনে ফেলছে। সমালোচনা আসছে, আধুনিক প্রজন্মের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাল রাখতে হাঁফিয়ে উঠছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১০
Share:

প্রতীক ছবি।

ঘরোয়া আড্ডায় ঠাট্টার ছলেই কথাটা বলতেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। ‘‘এত জনকে আমরা বহিষ্কার করেছি, শুধু তা-ই দিয়েই একটা গোটা দল হয়ে যায়!’’

Advertisement

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, অনিল বসু, প্রসেনজিৎ বসু, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, লক্ষ্মণ শেঠ থেকে ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়— সাম্প্রতিক কালে সিপিএমের বহিষ্কারের তালিকায় পরিচিত নেতাদের নাম সত্যিই দীর্ঘ। তার বাইরেও রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায় অজস্র অপরিচিত নামকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে দলের খাতা থেকে। সেই ছাঁটাই তালিকা নজরে রেখেই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, তরুণ প্রতিভা সামলানোয় কি বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব?

ব্রতীন সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ, জগমতী সাঙ্গওয়ান বা সদ্য ঋতব্রতের বহিষ্কারের ঘটনাই তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে চলার ক্ষেত্রে সিপিএমের ব্যর্থতার প্রশ্ন আরও বেশি করে সামনে এনে ফেলছে। সমালোচনা আসছে, আধুনিক প্রজন্মের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে তাল রাখতে হাঁফিয়ে উঠছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

Advertisement

সাম্প্রতিক কালের চার তরুণ নেতার বহিষ্কারের কারণ অবশ্যই আলাদা আলাদা। কিন্তু তাঁদের আবার মিলও রয়েছে কোথাও না কোথাও। ব্রতীন ও ঋতব্রত এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থেকে অল্প বয়সে সাংসদ হয়েছেন। প্রসেনজিৎ ও জগমতী দলের রাজনৈতিক লাইন মানতে না পেরে রোষের মুখে পড়েছেন। সিপিএমের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘চার জনের বহিষ্কারের কারণ ও পরিস্থিতি আলাদা। কিন্তু কোনও প্রশ্ন বা ক্ষোভ তৈরি হলে তাকে সামাল দিতে যে গণতান্ত্রিক আবহ দরকার, সেটার বোধহয় কোথাও অভাব হচ্ছে।’’

বহিষ্কারের সময়ে ব্রতীনকে নিয়ে কিছু অন্য রকম সমস্যা ছিল। পরে তিনি যোগ দিয়েছিলেন বিজেপি-তে। প্রসেনজিৎ নিজস্ব বৃত্তে বাম রাজনীতি করছেন। জগমতী মহিলা আন্দোলনে থেকেই ফিরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঋতব্রত কী করবেন, তার উত্তর এখনও ভবিষ্যতের গর্ভে। প্রসেনজিতের মতে, ‘‘প্রথমত, দলটার রাজনৈতিক লাইন কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না। একটার পর একটা পার্টি কংগ্রেস যাচ্ছে আর একই বিতর্ক চলেই যাচ্ছে! আর দ্বিতীয়ত, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব নিলে সমস্যা হয়ই।’’

ঋতব্রত বলছেন, ‘‘এখন যারা পার্টি করছে, তাদের ভাবনাচিন্তা, জীবনযাত্রা আগের চেয়ে আলাদা হবেই। কিন্তু নেতারা মনে করছেন, সব কিছু আগের মতোই থাকবে!’’ এখনই যেমন সিপিএমের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ বলছেন, নেপালদেব ভট্টাচার্য যদি শাস্তির মুখে পড়েও ১৪ বছর মুখ বুজে থেকে ফিরে আসতে পারেন, ঋতব্রত এত অধৈর্য হলেন কেন? যার জের টেনে রাজ্যসভার সাংসদের মন্তব্য, ‘‘নেপালদা’র সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। এখন একতরফা মানহানি করা হচ্ছে দেখেও আমি কী ভাবে একই রকম চুপ করে থাকব!’’

তরুণ নেতাদের সামলাতে তাঁরা ব্যর্থ হচ্ছেন, এমন অভিযোগকে অবশ্য ‘সরলীকরণ’ মনে করছেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘ওই কয়েক জনকে নিয়ে বেশি চর্চা হয়েছে। কিন্তু একটার সঙ্গে অন্যটার কোনও যোগ নেই। আর এই একই পার্টিতে কেরল বা ত্রিপুরায় তরুণ প্রজন্মের এক ঝাঁক নেতা তো ভাল ভাবে কাজ করছেন। বাংলার সংগঠনেও সব তরুণের অসুবিধা হচ্ছে কোথায়?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement