শ্রীলেখা মিত্র ও রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ প্রশমনের দায়িত্ব মহম্মদ সেলিমকে দিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। নিজস্ব চিত্র।
ক্ষুব্ধ রাহুল-শ্রীলেখাকে ধরে রাখতে উদ্যোগী হল সিপিএম। সোমবার ১৬ অগস্ট যাদবপুরে সিপিএমের শ্রমজীবী ক্যান্টিনের ৫০০ দিন উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বিজেপি-র অভিনেত্রী রূপা ভট্টাচার্য ও অভিনেতা অনিন্দ্যপুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে এসে সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে একটি মিছিলেও পা মেলান তাঁরা। সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষের সঙ্গে ছবি নেটমাধ্যমেও পোস্ট করেন তাঁরা। তারপরেই বিতর্কের সূত্রপাত। এমন ছবি প্রকাশ্যে আসতেই নেটমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। রাহুল বলেছিলেন,‘‘যদি টিকিট না পেয়ে হতাশ বিজেপি কর্মী বাম মঞ্চে জায়গা পায়, তা হলে আমি আজ এই মুহূর্ত থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।’’ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শ্রীলেখাও। তারপরেই বুধবার দল ছাড়ার কথা জানিয়ে নিজের নেটমাধ্যমের পাতায় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে দীর্ঘ চিঠিও লেখেন রূপা। তিনি লেখেন, ‘অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছি না। মানুষের ভালর জন্য ন্যায্য কথা বলব। ভাল কাজকে সমর্থন করব। খারাপের প্রতিবাদ করব।’
আর অনিন্দ্যপুলক বলেছেন, ‘‘আমার বাবা বাম সমর্থক। ফলে এই দলটিকে আমি কাছ থেকে চিনি। বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলাম টলিউডে ‘ওরা-আমরা’ বিভেদ মোছার জন্য। আড়াই বছর এই দলে থেকে দেখলাম, বিজেপি সমর্থকদের তথাকথিত কোনও শিক্ষা, সংস্কৃতি নেই। যা বাম দলে আছে। সেই ভুল শুধরে নিতেই আমার দলবদল।’’ তা সত্ত্বেও রাহুল বা শ্রীলেখার ক্ষোভ কমেনি বলেই জেনেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বুধবার রাজ্য সিপিএমের সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই ঠিক হয়, শ্রীলেখা ও রাহুলের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলবে দল। কথা বলে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। আর এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমকে।
প্রসঙ্গত, বিধানসভা নির্বাচনের আগে হাতেগোনা যে ক’জন লাল পতাকা হাতে বাম দলের সমর্থনে প্রচারে নেমেছিলেন, রাহুল ও শ্রীলেখা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাই তাঁদের সমর্থন কোনওভাবেই হারাতে নারাজ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কারণ, রাজ্য সিপিএমের শোচনীয় সাংগঠনিক অবস্থায় যাঁরা সিপিএমের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা ঠিক হবে না বলেই মনে করেন তাঁরা। তাই সেলিমই কথা বলে দলের প্রতি তাঁদের সমর্থন ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। রাহুল-শ্রীলেখাকে ধরে রাখার চেষ্টা করলেও, রূপা বা অনিন্দ্যপুলককে ধরে রাখতে আদৌ কোনও পদক্ষেপ সিপিএম করবে কিনা, তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই সিপিএম সূত্রে খবর। শ্রীলেখা বর্তমানে জুরিখে রয়েছেন, তাই সিপিএমের পক্ষ থেকে এখনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর। তবে সিপিএমের পদক্ষেপ নিয়ে রাহুল বলেছেন, ‘‘বৃত্ত বড় করতে হবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু বৃত্তের কেন্দ্রটা ঠিক রাখতে হবে। আমার সেদিনের পোস্টের পর দলের প্রায় সব শীর্ষ নেতার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, আমাদের আঘাত করে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।’’ তবে অনিন্দ্যপুলককে নিয়ে পার্টি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেও যে তাঁর নজর থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।