প্রতীকী ছবি।
গোষ্ঠী কোন্দলে দীর্ণ দলের কাউকে দাঁড় না করিয়ে অদ্বৈতধাম শান্তিপুরে এক পরিচিত মুখকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তাঁকে জেতানোর জন্য মাটি কামড়ে পড়েছিলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্র থেকে জেলার প্রায় সমস্ত বড় নেতা। তাতেই বাজিমাত। চার মাস আগে ১৬ হাজার ভোটে যে আসন খোয়াতে হয়েছিল, সেখানেই প্রায় ৬৫ হাজার ভোটে জিতলেন অদ্বৈতাচার্যের বংশধর ব্রজকিশোর গোস্বামী। অর্থাৎ ৮০ হাজারেরও বেশি ভোটের সুইং!
নদিয়ার শান্তিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে এই যদি হয় প্রথম দেখার মতো বিষয়, অপরটি হল বামেদের ‘পুনরুত্থান’। গোটা রাজ্যে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়া বামেরা এই কেন্দ্রে নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতটাই যে গণনার একটি পর্বে দ্বিতীয় স্থানের লড়াইয়ে বিজেপির ঘাড়ে প্রায় নিঃশ্বাস ফেলছিল তারা। শেষে তৃতীয় হলেও বিজেপির সঙ্গে সিপিএমের ফারাক মাত্র হাজার আটেক ভোটের। যেখানে চার মাস আগে সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফ মিলে সংযুক্ত মোর্চার ভোট ১০ হাজারও ছোঁয়নি, সেখানে সিপিএমের ভোট এ বার উঠে এসেছে প্রায় ৪০ হাজারে। কংগ্রেস অবশ্য দু’বছর আগের লোকসভা নির্বাচনের মতো সেই তিন হাজারের কোঠাতেই আটকে রয়েছে।
গত তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম অজয় দে-কে ছাড়া নির্বাচন দেখল শান্তিপুর। টানা পাঁচ বারের বিধায়ক তথা পুরপ্রধান অজয়বাবু কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন ২০১৪ সালে। সে বার তিনি বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে উপনির্বাচনে জিতে ফিরলেও পরের দুই বিধানসভা ভোটে আর জিততে পারেননি। চার মাস আগে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের কাছে পরাজিত হন তিনি, যিনি জিতেও বিধায়ক পদ ছেড়ে দেওয়াতেই এই উপনির্বাচন। ভোটের পরেই অজয়বাবু করোনায় আক্রান্ত হন এবং কিছু দিন রোগভোগের পরে মারা যান। অজয়-জমানার অবসানে তাঁকে কেন্দ্র করে দলের দুই শিবিরের দ্বন্দ্বও কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসে। এই পরিস্থিতিতেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশ ব্রজকিশোরকে প্রার্থী করা হয়, যাঁর ভাবমূর্তি নিয়ে ভোটারদের কোনও সমস্যা ছিল না। তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী রত্না ঘোষের কথায়, “গোষ্ঠী কোন্দল, ভুল বোঝাবুঝি সরিয়ে রেখে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীরা একজোট হয়ে ঝাঁপিয়েছেন। এটা তারই ফল।” আর ব্রজকিশোর বলছেন, “সব নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ সবাইকে ধন্যবাদ।”
কিন্তু তা বলে বিজেপির গড় যে একেবারে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে, তা হয়তো অনেকেই আঁচ করতে পারেননি। শেষ লগ্নে বারবার প্রচারে এসেও ভোটারের মন ভেজাতে পারেননি রাজ্য বিজেপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আগের বারের প্রায় এক লাখ ১০ হাজার ভোটের শীর্ষ থেকে ৬৩ হাজার খুইয়ে পিছলে নেমে এসেছে তারা। কেন? জগন্নাথের মতে, “উপনির্বাচনে মানুষ শাসক দলের সঙ্গে থাকতেই পছন্দ করে। সেই সঙ্গে, সিপিএমের ভোট বাড়াটাও একটা কারণ।”
এক সময়ে শান্তিপুরে বামেদের ভাল প্রতিপত্তি ছিল। এই আসনটি আরসিপিআই-কে ছাড়ত বামফ্রন্ট, বিধায়ক বিমলানন্দ মুখোপাধ্যায় বাম সরকারে মন্ত্রীও ছিলেন। সেই সুদিন হারানোর পরে ইদানীং রাজ্যের প্রায় সব জায়গার মতো বামেদের ভোট বিজেপির বাক্সে গিয়ে জমা হচ্ছিল। শান্তিপুরে সেই খেলাটা আবার ঘুরে গিয়েছে। সিপিএম প্রার্থী সৌমেন মাহাতো বলেন, “যে জায়গা থেকে আমরা ভোট শুরু করেছিলাম, সেখান থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি হয়েছে। এটা আমাদের কর্মীদের উজ্জীবিত করবে।”