তৃণমূলের ধাক্কায় দৌড় ভিন্ মুলুকে, প্রশ্ন দলেই

নিখিলেশ প্যারিসে, মইদুল ঢাকাতে, নেই তারা আর কোনও খবরে! বাঙালি শিল্পীর যুগোত্তীর্ণ গানকে একটু অদল-বদল করে নিলে বলা যেতেই পারে— সেলিম কেরলে, সুজন মাদুরাইয়ে, শমীক মহারাষ্ট্রে! তবে তাঁরা খবরে থাকতেই চেয়েছিলেন!

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

নিখিলেশ প্যারিসে, মইদুল ঢাকাতে, নেই তারা আর কোনও খবরে!

Advertisement

বাঙালি শিল্পীর যুগোত্তীর্ণ গানকে একটু অদল-বদল করে নিলে বলা যেতেই পারে— সেলিম কেরলে, সুজন মাদুরাইয়ে, শমীক মহারাষ্ট্রে! তবে তাঁরা খবরে থাকতেই চেয়েছিলেন!

বাংলার জন্য দেশ জুড়ে সহমর্মিতা আদায়ের কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে প্রায় এমনই অবস্থা হয়েছে সিপিএমের! দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, এত পরিশ্রম করে, টাকা খরচা করে এমন দৌড়ে বেড়ানোয় কী লাভ?

Advertisement

তৃণমূলের হাতে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র কী ভাবে বিপন্ন, তার প্রচার চালাতে অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজ্যে রাজ্যে প্রচার অভিযানে বেরিয়েছিল সিপিএম। সিদ্ধান্ত পলিটব্যুরোর। এ বারের অভিনবত্ব, ভিন্ রাজ্যে গিয়ে তৃণমূলের কাণ্ডকারখানা বয়ান করার দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল বঙ্গ ব্রিগেডের নেতাদেরই। এক একটা রাজ্য কমিটি কর্মসূচি আয়োজন করবে আর সেখানে উপস্থিত হবেন বঙ্গজ নেতারা। সেই ছক মেনেই মহম্মদ সেলিম ঘুরেছেন দিল্লি থেকে কেরল। সুজন চক্রবর্তী ছুটেছেন কোয়ম্বত্তূর থেকে মাদুরাই। সূর্যকান্ত মিশ্র ত্রিপুরা আর ওড়িশা। ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছেন রাঁচি। শমীক লাহিড়ীকে পাঠানো হয়েছে মহারাষ্ট্রে। দলের দেওয়া দায়িত্ব পালন করেছেন সকলেই। কিন্তু দলের অন্দরে চর্চা হচ্ছে, অরণ্যে রোদনের এর চেয়ে উৎকৃষ্ট পন্থা কি আর কিছু হতে পারতো!

ত্রিপুরা বাদে সব রাজ্যেরই ভাষা আলাদা। রাজনীতির সমীকরণও আলাদা। সিপিএম নেতাদেরই একাংশ ঘরোয়া আলোচনায় প্রশ্ন তুলছেন, তৃণমূল কেমন, কী বৃত্তান্ত, এ সব জেনে তামিলনাড়ুর লোকের কী লাভ! সেখানে বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবুকে চেনেই বা ক’জন? মহারাষ্ট্রে শমীকের কথা শোনার জন্যই বা আগ্রহ থাকবে কার? এর চেয়ে বরং সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটেরা বাংলার জেলায় জেলায় গিয়ে বিপন্ন, সন্ত্রস্ত দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ালে কাজের কাজ হতো! দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘সহমর্মিতা নেওয়ার এই প্রচার অভিযানে কোনও অনুষ্ঠানেই কেউ কোনও প্রশ্ন করে বাংলার ব্যাপারে আলাদা করে কিছু জানতে চেয়েছেন বলে শুনিনি। আমরা আমাদের মতো বলছি, চলে আসছি। কতটা উপকার এতে দলের হচ্ছে, জানি না!’’

সিপিএমের মধ্যেই কেউ কেউ এমন প্রশ্নও তুলছেন, কেরল এবং ত্রিপুরায় দলের সংগঠন না হয় শক্তিশালী। কিন্তু যে সব রাজ্যে সুদূর ভবিষ্যতেও দলের ভোটব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেখানে এমন পণ্ডশ্রম কেন! তৃণমূলকে ঠেকাতে কেন কংগ্রেসের হাত ধরা হয়েছিল, সেই ব্যাখ্যাই বা ভিন্ মুলুকে শুনিয়ে কী লাভ! তার চেয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে নেতাদের এনে বাংলায় কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া লাভজনক হতো!

সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, গাজা ভূখণ্ডে হিংসার বিরুদ্ধে যদি কলকাতায় মিছিল হতে পারে, বাংলার জন্য তামিলনাড়ুতেই বা কর্মসূচি হবে না কেন? কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে কি শুধু কাশ্মীরেই আলোচনা হয়? দলের পলিটব্যুরো সদস্য সেলিমের কথায়, ‘‘কমিউনিস্ট পার্টি এই ভাবেই চির কাল সহমর্মিতার পরিবেশ তৈরি করতে চায়। সংবাদমাধ্যম তো আমাদের কথা লিখবে না। আমরা তাই নিজেরাই গিয়ে অন্য রাজ্যের কমরেডদের বাংলার অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করতে চেয়েছি। এটা মূলত নিজেদের দলের কর্মী-সমথর্কদের জন্যই কর্মসূচি ছিল।’’

তাতে কতটা চিঁড়ে ভিজল, তার উত্তর অবশ্য নিখিলেশ-মইদুলদের মতোই খবরের বাইরে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement