Congress

WB municipal election 2022: পুরভোটে বাম-কংগ্রেসের হাল: জোটপন্থী উপর মহল, নিচু তলায় ‘একলা চলো’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য মেনে নিচ্ছেন, দলের রাজ্য নেতৃত্বের ঘোষিত অবস্থান আর নিচু তলায় কাজের মধ্যে অনেক ফাঁক থাকছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:২০
Share:

ফাইল চিত্র।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি পুরসভায় বামেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার ঘণ্টাখানেক আগে সিপিএমের এক পরিচিত নেতাকে ফোন করেছিলেন কংগ্রেসের এক সাংসদ। কিছু ওয়ার্ডে সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে। অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যেই তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিচু তলার বক্তব্যের সঙ্গে ওই প্রস্তাব মিলছে না। তাঁরা অপারগ।

Advertisement

হুগলি জেলার দু’টি পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে সমঝোতা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সিপিএম নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন কংগ্রেসের এক প্রাক্তন বিধায়ক। সমস্যা মেটেনি। কারণ একই— নিচু তলার আপত্তি। প্রসঙ্গত, রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের ওই দুই নেতাই জোটপন্থী বলে সম্যক পরিচিত।

বিছিন্ন দু’টো বা তিনটে পুরসভা নয়। রাজ্য জুড়ে এ বারের পুরভোটে বাম ও কংগ্রেসের সমীকরণের হাল দাঁড়িয়েছে এই রকমই। সিপিএম এবং কংগ্রেসের রাজ্য নেতারা বলছেন, তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান বদল হয়নি। বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সব শক্তিকে একজোট করাই তাঁদের লক্ষ্য। কিন্তু জেলায় জেলায় স্থানীয় নেতৃত্ব হাঁটছেন অন্য পথে! আগামী সপ্তাহে হতে চলা চারটি পুর-নিগম বা ২৭ ফেব্রুয়ারির ঘোষিত ১০৮টি পুরসভায় অল্প কিছু ‘ব্যতিক্রম’ বাদ দিলে বাম ও কংগ্রেস লড়তে চলেছে নিজেদের মতো। দলের রাজনৈতিক লাইন না মানার দায়ে কোনও দলের রাজ্য নেতৃত্বই স্থানীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্তকে বাতিলও করছেন না। বরং, স্থানীয় স্তরের মনোভাবকেই তাঁরা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

Advertisement

জোট গড়ে গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে বেনজির ভরাডুবির পরে এ বার পুরভোটে সমঝোতা নিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেস কোনও আনুষ্ঠানিক আলোচনাই করেনি। অথচ কোনও দলই বিধানসভা ভোটের পর্যালোচনায় ভরাডুবির জন্য জোটকে দায়ীও করেনি! কলকাতার পুরভোটের আগে থেকেই প্রদেশ কংগ্রেস এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ভার জেলা নেতৃত্বের হাতে ছেড়ে রেখেছে। আর সিপিএমের কৌশল আরও বিচিত্র হিসেবেই রাজনৈতিক শিবিরের চোখে পড়ছে!

আসন্ন রাজ্য সম্মেলনের জন্য সিপিএমের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের লাইন অপরিবর্তিত রাখার কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কলকাতার পুরভোট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম আগে অধিকাংশ ওয়ার্ড বেছে নিয়ে প্রার্থী ঠিক করে ফেলছে। তার পরে কিছু ওয়ার্ড ছেড়ে রেখে বলা হচ্ছে, বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রার্থীকে সমর্থন করা হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্ট যেমন ওই জেলার ২৫টি পুরসভার যে ৬৪৬টি ওয়ার্ডে ভোট হচ্ছে, তার মধ্যে ৬২টি ছেড়ে রেখে বাকিগুলোয় প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কংগ্রেস এমন ‘একতরফা মডেল’ মানতে নারাজ! তাতে জোটের আপাতত দফারফা!

ঘনিষ্ঠ মহলে প্রদেশ কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার ক্ষোভ, ‘‘সিপিএমের কিছু অংশের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীতে এখনও সোভিয়েত ইউনিয়ন আছে এবং এ রাজ্যে বামফ্রন্টই ক্ষমতায় আছে! নিজেরা যতগুলোয় পারলাম, প্রার্থী দিয়ে দিলাম। বাকিগুলোর জন্য গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে আহ্বান! আমরা তো জোট ভাঙিনি। কিন্তু এ রকম মনোভাব হলে কী করা যাবে!’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য মেনে নিচ্ছেন, দলের রাজ্য নেতৃত্বের ঘোষিত অবস্থান আর নিচু তলায় কাজের মধ্যে অনেক ফাঁক থাকছে। তবে ওই নেতার যুক্তি, ‘‘অদূর ভবিষ্যতের বৃহত্তর লড়াইয়ের জন্য আমরা দরজা বন্ধ করতে চাই না। স্থানীয় স্তরের ভোটে সব কিছু উপরের লাইন মেনে চলে না। স্থানীয় স্তরে নিজেদের দলের প্রার্থী না থাকার ব্যাপারটা অনেকেই মানতে চায় না। নিচু তলায় আমাদের দলের বড় অংশেরই বক্তব্য, কংগ্রেসের প্রার্থী থাকলে ওদের ভোটটা ওদের বাক্সেই থাকবে, অন্য দিকে যাবে না। তাতে আখেরে বাম ও কংগ্রেস, দু’দলেরই লাভ!’’ কলকাতা পুরভোটে একা লড়ে ভোট বাড়ানোর পরে এই মত উড়িয়েও দিতে পারছে না আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement