সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য।
গত শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের ফেসবুক এবং ইউটিউব লাইভে তাঁর সাক্ষাৎকার এবং তার ভিত্তিতে আনন্দবাজারের ওয়েবসাইটে কয়েকটি খবর প্রকাশের পরেই রাজনৈতিক মহলের একাংশ সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যকে কটূ এবং তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা শুরু করেছে।
তার প্রেক্ষিতেই সোমবার তাঁর ফেসবুক পেজ-এ একটি নাতিদীর্ঘ পোস্ট করছেন দীপঙ্কর। সেখানে তিনি স্পষ্টই লিখেছেন, অনেকে প্রশ্ন তুললেও পুরো কথোপকথন শুনলে ‘বিভ্রান্তি’র কোনও কারণ নেই। সেখানে তিনি আরও লিখেছেন, তাঁদের অবস্থান বুঝতে অসুবিধা হলে বাংলার বামপন্থী বন্ধুরা যেন একটু কেরলের দিকে তাকিয়ে দেখেন।
প্রসঙ্গত, ওই সাক্ষাৎকারে দীপঙ্করের যে বক্তব্য নিয়ে (বা সেই সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম নিয়ে) তথাকথিত বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, তা হল বিজেপি-বিরোধী বৃহত্তর জোটে তৃণমূল-সহবিভিন্ন আঞ্চলিক দলের সঙ্গে তাঁর দল একজোট হয়ে লড়তে প্রস্তুত। যা খবরের শিরোনামে ‘বৃহত্তর জোট’ শব্দটি উল্লেখ করে ‘মমতার সঙ্গে যেতে আপত্তি নেই’ বলে লেখা হয়েছিল।
তার পর থেকেই নেটমাধ্যমে দীপঙ্করকে তুলোধনা করতে নেমে পড়ে ‘রাজনীতি সচেতন’ জনতার একাংশ। বস্তুত, আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে ‘লাইভ’ চলাকালীনও সেখানে বিভিন্ন কুরুচিকর ‘কমেন্ট’ করা হচ্ছিল। শনিবার রাত এবং রবিবার দিনভর যার সুর আরও উচ্চগ্রামে ওঠে।
দীপঙ্কর ওই সাক্ষাৎকারে এক কাল্পনিক (হাইপোথেটিক্যাল) প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, তাঁর লন্ডনপ্রবাসী কন্যা বহুজাতিকে চাকরি করলেও তাঁর আপত্তি নেই। তবে তিনি আশ্বস্ত যে, তাঁর কন্যা ‘ভক্ত’ হয়ে ওঠেনি। সেই প্রসঙ্গ টেনেও দীপঙ্করকে নেটমাধ্যমে কুরুচিকর আক্রমণ করা হয়েছে। ঘটনা হল, দীপঙ্কর ওই বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর অভিমত দিয়েছিলেন ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’-র প্রেক্ষিতে। যার নিহিত অর্থ, তাঁর কন্যার স্বাধীনতা রয়েছে তাঁর নিজস্ব জীবন বেছে নেওয়ার। তা বহুজাতিকের চাকরিও হতে পারে। তবে ঘটনাপ্রবাহ বলছে, তাঁর কন্যা অনন্যা এবং স্ত্রী কল্পনা বিদেশের মাটিতেও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। পুরো বিষয়টিই দীপঙ্কর বলেছিলেন কথোপকথনের সূত্রে। প্রতিটি খবরের সঙ্গে পুরো কথোপকথনের ভিডিয়ো লিঙ্কও দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু যে ভাবে দীপঙ্করকে আক্রমণ করা শুরু হয়েছে, তাতে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, নিন্দকেরা পুরো কথোপকথনটি না শুনেই খড়্গখস্ত হয়ে উঠেছেন। সে সব বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই দীপঙ্করের সোমবারের ফেসবুক পোস্ট।
পোস্টে দীপঙ্কর সরাসরিই লিখেছেন, ‘আনন্দবাজার ডিজিটালের (অনলাইন) খবরের শীর্ষক (শিরোনাম) দেখে কিছু বন্ধুদের মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। পুরো কথোপকথন শুনলে আশা করি কোনও বিভ্রান্তির কারণ নেই। যাঁরা শুধু শীর্ষক দেখে ধারণা করছেন তাঁদের জন্য বলি, পশ্চিমবঙ্গে আমরা অবশ্যই বিরোধীদল এবং আমরা চাই বিজেপি-কে পিছনে ঠেলে দিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে আমরা বামপন্থীরা যেন প্রধান বিরোধীপক্ষ হিসেবে উঠে আসতে পারি।’
পাশাপাশিই দীপঙ্কর লিখেছেন, ‘সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে আমরা অবশ্যই ব্যাপকতম বিরোধী জোট চাই।কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল ছাড়াও তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক বিরোধী দলের সঙ্গে বামপন্থীরা একজোট হয়ে লড়তে প্রস্তুত। এই অবস্থান বুঝতে যদি অসুবিধা হয়, তবে বাংলার বামপন্থী বন্ধুরা একটু কেরলের দিকে তাকিয়ে দেখুন।’