সিঙ্গুর শুনানি

নথি দিন টাটাদের, রাজ্যকে নির্দেশ কোর্টের

সিঙ্গুর প্রশ্নে মমতা সরকারের কাছে বুদ্ধদেব জমানার নথি চাইল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের শুনানিতে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে ইতিমধ্যেই ডিগবাজি খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০৩:০২
Share:

সিঙ্গুর প্রশ্নে মমতা সরকারের কাছে বুদ্ধদেব জমানার নথি চাইল সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

শীর্ষ আদালতের শুনানিতে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে ইতিমধ্যেই ডিগবাজি খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের সিদ্ধান্তকে নিয়মবিরুদ্ধ বলে কার্যত সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণকে বেআইনি তকমা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আইনজীবী। এই পরিস্থিতিতে আজ সিঙ্গুর মামলার শুনানিতে নথি চেপে যাওয়ার অভিযোগ এনেছে টাটারা।

আদালতে রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, সিঙ্গুরে সঠিক পদ্ধতি মেনে জমি অধিগ্রহণ হয়নি। অধিগ্রহণ নিয়ম মেনে হয়েছে কিনা, তা-ই এখন খতিয়ে দেখছে শীর্ষ আদালত। ইতিমধ্যেই সিঙ্গুর জমি অধিগ্রহণ প্রশ্নে তিন-তিনখানা হলফনামা জমা দিয়েছে রাজ্য। যেগুলি পরস্পরবিরোধী। আজ টাটারা অভিযোগ করেন, সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য তাদের হাতে নেই। সমস্ত নথি হাতে পেলেই কী পদ্ধতিতে তৎকালীন রাজ্য সরকার ওই জমি অধিগ্রহণ করেছিল তা স্পষ্ট হবে। টাটা মোটরসের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতকে জানান, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত নথি তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। ওই আবেদনের ভিত্তিতে আজ সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিদের আগামী মঙ্গলবারের শুনানির আগে মামলা সংক্রান্ত সমস্ত নথি টাটাদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ আইনজীবীদের মত, রাজ্যে পালাবদল হলে শাসক দল পাল্টে যেতে পারে। কিন্তু সরকার থেকে যায়। আগের সরকারের সিদ্ধান্তের দায় নিতে হয় পরের সরকারকেই। যে কারণে এক সরকারের করা ঋণ মেটায় অন্য সরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাম আমলে হওয়া সিঙ্গুরের জমির অধিগ্রহণ সঠিক নয় বলে আদালতকে জানিয়ে বসে রয়েছে মমতা সরকার। ফলে টাটাদের জন্য সমস্যা হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকার কী কারণে, কোন যুক্তিতে ওই জমি অধিগ্রহণ করেছিল তার সমর্থনে বলার জন্য কেউ নেই। উপরন্তু ওই সময়ে জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে রাজ্যের মন্ত্রিসভা কোন পরিস্থিতিতে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেই কাগজও হাতে পায়নি টাটারা। বুদ্ধদেব সরকার কোন যুক্তিতে জমি অধিগ্রহণ করেছিল, সেই সব তথ্য সামনে এলেই বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে।

আজ বিচারপতি ভি গোপাল গৌড়া বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার টাটাদের মাধ্যমে শিল্প আনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আদালতের কাছে মূল বিচার্য বিষয় হল আইন মেনে জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল কিনা। টাটাদের সিঙ্গুরের জমি দেওয়া দেখে মনে হচ্ছে একটি সংস্থার জন্য সব করা হয়েছে।

টাটা মোটরসের আইনজীবী গোপাল জৈন জানান, তাদের কোনও বাড়তি সুবিধে দেওয়া হয়নি। মোট পাঁচ-ছ’টি জমি দেখানো হয়েছিল। খড়্গপুরের জমিটি ঠিক ছিল না। হাওড়াতে যে জমিটি দেখানো হয়, সেটির প্রবেশপথ সরু ছিল। এর মধ্যে সিঙ্গুরের জমি টাটাদের পছন্দ হয়। জমিটি শিল্পের জন্য উপযুক্ত— এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরে রাজ্য সরকারকে তা জানানো হয়। পরে টাটাদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, টাটাদের কোনও বাড়তি সুবিধে দেওয়া হয়েছিল, এমন নয়। সংস্থা মনে করেছিল বাকিগুলির তুলনায় ওই জমিতেই শিল্প গড়লে সুবিধে হবে। তাই সিঙ্গুরের সেই জমিকে বেছে নেওয়ার পিছনে কোনও অন্যায় নেই। আর সব রাজ্যই শিল্পবিকাশের মাধ্যমে নিজের লাভ খোঁজে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এটিকে একটি ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল অটোমোবাইল হাব গড়ে তোলার। যাতে রাজ্যে শিল্পের বিকাশ হয়। লোকেদের চাকরি হয়। টাটাদের দাবি, তারা গুজরাতে যাওয়ায় সে
রাজ্যে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে।

বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র মন্তব্য করেন, টাটারা নিজেদের সুবিধের কথা ভেবেই পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিল। শিল্প দরকার। কিন্তু শিল্পের নামে যে পরিমাণ উর্বর জমি টাটাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তা দেখে মনে হয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি জমি নেওয়া হয়েছে। যেখানে দরকার ছিল এক একর নেওয়ার সেখানে নেওয়া হয়েছে দশ একর। প্রশ্ন হল, টাটারা চাইলেই কেন এ ভাবে জমি অধিগ্রহণ করবে সরকার। রাজ্য সরকারের উচিত ছিল বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করা। উর্বর জমি নেওয়ার প্রশ্নে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি জানান, জনস্বার্থে এ ভাবে উর্বর জমি নেওয়ার উদাহরণ রয়েছে। বিচারপতি মিশ্র বলেন, তা থাকলেও সরকারের উচিত ছিল পতিত জমি খুঁজে বের করা। প্রয়োজনে উর্বর জমি বাদ দিয়ে অধিগ্রহণ করা যেত। তা ছাড়া জমি অধিগ্রহণের আগে সরকারের উচিত ছিল এলাকাটিকে শিল্পাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা। তা না করেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement