করোনা-বিধ্বস্ত চিনের উহান থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে ফেরানোর পরে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ভারতীয়দের। রবিবার দিল্লি বিমানবন্দরে। পিটিআই
একসঙ্গে চিন থেকে বিমানে কলকাতা হয়ে দেশের বাড়িতে ফিরেছেন তাঁরা। দু’জনেই কেরলের। প্রথমে কেরলের এক ছাত্রীর করোনা-সংক্রমণ ধরা পড়ে। তাঁর সঙ্গে আসা দ্বিতীয় জনের দেহেও নোভেল করোনাভাইরাসের (এনসিওভি) সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের উদ্বেগ দ্বিগুণ হয়েছে।
কারণ, কেরলের আক্রান্ত দু’জনেই কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে কেরলে ফিরেছেন এবং বিমানে তাঁদের সহযাত্রীদের মধ্যে ছিলেন কলকাতা-সহ বাংলার আট বাসিন্দা। কলকাতা-যোগ থাকায় সেই আট বিমানযাত্রীর খোঁজে ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে পাওয়া গিয়েছে সহজেই। কার্যত গোয়েন্দাগিরি চালিয়েই বাকি ছ’জনকে খুঁজে বার করেছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।
কেরলের বাসিন্দা, চিনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর পরে বিমানে তাঁর সহযাত্রী কেরলবাসীর শরীরেও এনসিওভি সংক্রমণ সম্পর্কে শনিবার নিশ্চিত হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ২৩ জানুয়ারি চিনের কুনমিং থেকে কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে ২০ জনের একটি দলের সঙ্গে কেরলে ফেরেন প্রথম জন। বায়ুবাহিত ওই রোগে আক্রান্ত দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম জনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ওই বিমানের যে-পঞ্চাশ জন যাত্রীকে ‘স্ক্রিনিং’ বা স্বাস্থ্যপরীক্ষার তালিকায় রাখা হয়েছিল, তাঁদের আইসোলেশনে রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রের তরফে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, ওড়িশা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গানা ও উত্তরপ্রদেশ সরকারকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
লক্ষণ
জ্বর, সর্দিকাশি, শ্বাসকষ্ট।
রক্ষাকবচ
মুখোশ, দস্তানা, গাউন। মুখোশে যেন নাক, মুখ ও চোয়াল ঢাকা থাকে। সারা শরীর ঢাকা বিশেষ পোশাক চাই চিকিৎসক -স্বাস্থ্যকর্মীদের।
কী করবেন
আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার আগে-পরে সাবানে হাত পরিষ্কার করুন। দস্তানা পরে রোগীর পরিচর্যা করলেও হাত ধুতে হবে। আক্রান্ত বা সংক্রমণের লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিকে আলাদা ঘরে রাখা জরুরি। বাড়ির জানলা খোলা রাখা প্রয়োজন।
বঙ্গবাসী যে-আট জন ওই বিমানে ছিলেন, ‘বিভ্রান্তিকর’ ঠিকানার দরুন তাঁদের মধ্যে ছ’জনের খোঁজ পেতে সমস্যায় পড়ে স্বাস্থ্য ভবন। কারণ, কলকাতা বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সময় পরিচয় সংক্রান্ত ঘোষণাপত্রে তাঁদের ঠিকানা অসম্পূর্ণ ছিল। যে-ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছিল, তা হয় ভুল অথবা তাতে ফোন করলে কেউই ধরছেন না। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘ছ’জনকে যে পাওয়া যাচ্ছে না, তা দিল্লিকে জানানো হয়েছিল। তার পরে গোয়েন্দা দফতরের কায়দায় পাসপোর্ট থেকে তথ্য বার করার কথা মাথায় আসে। তাতেই কাজ হয়েছে।’’
স্বাস্থ্য ভবনের খবর, আট জনের মধ্যে এক জন কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান এবং অন্য এক জন উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। গাঙ্গুলিবাগানের বাসিন্দার লালার নমুনা শনিবার পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি বা এনআইভি-তে পাঠানো হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দার লালার নমুনা আজ, সোমবার সংগ্রহ করার কথা। বাকি ছ’জনের মধ্যে তিন জন কলকাতাবাসী চিনা নাগরিক। তাঁরা দেশে ফিরে গিয়েছেন। এক জন দিল্লির বাসিন্দা, কেন্দ্রকে তা জানানো হয়েছে।
এক জন রাজ্যের জঙ্গলমহল এবং এক জন উত্তরবঙ্গের একটি জেলার বাসিন্দা। তাঁদের লালার নমুনা সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। প্রশ্ন উঠছে, যে-চার জন রাজ্যে আছেন, স্বাস্থ্য ভবন কি তাঁদের আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করেছে? ‘‘এখনও তার প্রয়োজন হয়নি। ওই চার জনের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি। কী করতে হবে, তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ গিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছেও। আতঙ্কের কোনও কারণ নেই,’’ আশ্বাস দিয়েছেন এক স্বাস্থ্যকর্তা।
আরও দু’টি দেশ থেকে আসা বিমানযাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। চিন ও হংকং ছাড়া অন্য দু’টি দেশ হল তাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। দু’সপ্তাহ আগে চিনে গিয়েছিলেন, এমন কোনও ব্যক্তি হংকং, তাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিমানের যাত্রী-তালিকায় থাকলে তাঁদেরও ‘স্ক্রিনিং’ হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছিল, শুক্রবার থেকে কলকাতার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এনটেরিক ডিজ়িজ়েস বা নাইসেডে নমুনা পরীক্ষা করা যাবে। তার পরেও পুণেতে নমুনা পাঠানোর কারণ কী? নাইসেডের
ডিরেক্টর শান্তা দত্ত জানান, কিছু জটিলতার জন্য শনিবার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি। তাই নমুনাগুলি এনআইভি-তে পাঠানোর ব্যবস্থা করে নাইসেড। তবে এখন আর নাইসেডে নমুনা পরীক্ষায় কোনও অসুবিধা নেই বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী রবিবার বলেন, ‘‘ওই বিমানে ফেরা সব বঙ্গবাসীরই ঠিকানা জানা গিয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সহজে খুঁজে পাওয়া যায়, এমন ঠিকানা যাতে ঘোষণাপত্রে লেখা থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে বলেছি দিল্লিকে।’’