ছবি রয়টার্স।
নিয়ন্ত্রক ডিসিজিএ অনুমোদন দেওয়ার দিন দশেকের মধ্যে সারা দেশে গণ টিকাকরণের কাজ শুরু করতে কেন্দ্র তৈরি বলে মঙ্গলবারই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের দাবি, রাজ্যে সেই কাজ শুরু করতে পুরোদস্তুর তৈরি নবান্নও। তবে টানা এক বছর ‘কোভিড-যন্ত্রণা’ ভোগের পরে টিকার জন্য আর তর সইছে না অনেকের। তাই বাজার থেকে সরাসরি কিনে কবে প্রতিষেধক নেওয়া যাবে, সে বিষয়েও অনেকের মধ্যে আগ্রহ যথেষ্ট। এমনকি, মাঝেমধ্যে খোঁজ পড়ছে ফাইজ়ার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার টিকার। ভারতে প্রতিষেধক প্রয়োগের জন্য যারা ছাড়পত্রই পায়নি এখনও!
গণ টিকাকরণের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ভবন জানাচ্ছে, প্রথম ধাপে রাজ্যের ছ’লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী প্রতিষেধক পাবেন। তার মধ্যে পাঁচ লক্ষের নাম, ঠিকানা-সহ তথ্যভাণ্ডার তৈরি। ২০ হাজার টিকাদাতার প্রশিক্ষণ সারা। বিভিন্ন হাসপাতালে এই স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার পরে পালা আসবে পুলিশ, হোমগার্ড, সিভিক পুলিশ, আধা সামরিক বাহিনীর টিকাকরণের। সেই সংখ্যাও তিন-চার লক্ষ। তার পরে পাবেন প্রশাসনিক অফিসে কর্মরত সরকারি কর্মীরা। চতুর্থ ধাপে প্রতিষেধক পাবেন ৫০ বছরের বেশি বয়স এবং ৫০-এর কম বয়স কিন্তু আনুষঙ্গিক অসুস্থতা (কোমর্বিডিটি) থাকা ব্যক্তিরা। সব মিলিয়ে, ছ’মাসে প্রায় এক কোটি জনের টিকাকরণে রাজ্য তৈরি বলে স্বাস্থ্য কর্তাদের দাবি।
আপাতত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেক-আইসিএমআরের কোভ্যাক্সিনকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, কবে তা খোলা বাজার থেকে কিনে ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজেরাই নেওয়া যাবে, সে বিষয়ে অনেকের আগ্রহ যথেষ্ট। পুরনো, স্বাভাবিক জীবনে ফেরার তাগিদ এতটাই তীব্র যে, অনেকে খোঁজ করছেন ফাইজ়ার এবং মডার্নার প্রতিষেধকেরও। জানতে চাইছেন, পরে বাজারে সেগুলির আসার সম্ভাবনা আছে কি না। এমনকি, ফাইজ়ারের যে টিকা হিমাঙ্কের বহু নীচে (মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রাখা জরুরি, তার উপযুক্ত সংরক্ষণ-পরিকাঠামো গড়ারও অনুমতি চেয়েছে একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল।
যে টিকা এ দেশে ছাড়পত্রই পায়নি, তাদের সম্পর্কে এমন আগ্রহ কেন? স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, এর সম্ভাব্য কারণ দু’টি: প্রথমত, বেশি দামে কিনেও নিজের খরচে বিদেশি প্রতিষেধক নিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা এ শহরে কম নয়। ফাইজ়ার বা মডার্নার টিকার দর তুলনায় বেশি হওয়ায়, এ দেশে তা ছাড়পত্র পেলে, বাজারে সেগুলি তাড়াতাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা অনেকের।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই দুই প্রতিষেধকের কার্যকারিতার হার ৯০ শতাংশের উপরে। দু’য়ের ঘরেই আমেরিকার নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্র। প্রথমটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। হয়তো এই সব মিলিয়ে আস্থা তৈরি হয়েছে।
মাস ছয়েকের মধ্যে এই দু’টি-সহ আরও বেশ প্রতিষেধক বাজারে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে আপাতত যে দেশে শুধু কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনই দেওয়া হবে, তা মনে করাচ্ছেন তাঁরা।