রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও ১৮ জনের, জানাল নবান্ন। ছবি: পিটিআই।
রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মতে, তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার কারণেই। বাকি ৩৯ জনের শরীরে ঘটনাচক্রে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মিললেও তাঁদের মৃত্যু হয়েছে ‘কোমর্বিডিটি’র কারণেই। শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানালেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। গত কাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১৫।
ঘটনাচক্রে এ দিন দুপুরেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দু’টি চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকার গঠিত চিকিৎসকদের বিশেষ কমিটি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয়। কী কারণে ওই কমিটি গঠন করা হল, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। এমনকি চিঠির একটা অংশে লেখা হয়েছে, ‘‘বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি গঠনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়েপ্রিন্সিপাল সেক্রেটারি তাঁর প্রেজেন্টেশনে ২৩ এপ্রিল জানিয়েছিলেন, করোনা আক্রান্ত কারও যদি পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়, সে ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তিকে করোনায় মৃত বলে গণ্য করা যায় না। এটা আইএমসিটির কাছে যুক্তিগ্রাহ্য লাগছে না। হাসপাতালে কোনও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর এই তুলনার ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে।’’ আর সে কারণেই বেশ কিছু বিষয় জানতে ওই চিঠির মাধ্যমে রাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
এর পরেই এ দিন বিকেলে নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যসচিব জানালেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রের নির্দেশেই। তাঁর কথায়, ‘‘৩ এপ্রিল রাজ্য সরকার চিকিৎসকদের নিয়ে একটি অডিট কমিটি গঠন করে। ওই অডিট কমিটি কেন্দ্রের নির্দেশেই গঠন করা হয়েছে।’’ মুখ্যসচিবের ব্যাখ্যায়, ‘‘কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, করোনার কারণে কত জন মারা গিয়েছেন এবং করোনা-পজিটিভ হয়েও অন্য কোনও কারণে মারা গিয়েছেন কত জন— তা নির্ণয়ের জন্য।’’ এর পরেই মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘সরকার নিযুক্ত ওই কমিটি এখনও পর্যন্ত ৫৭টি মৃত্যুর ঘটনা অডিট করেছে। তার মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনার কারণেই। বাকি ৩৯ জনের ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ‘কোমর্বিডিটি’। তবে, ঘটনাচক্রে তাঁদের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।’’ কোন কোন ক্ষেত্রকে ‘কোমর্বিডিটি’ ধরা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যাও এ দিন অডিট কমিটির রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃত করেছেন মুখ্যসচিব।
আরও পড়ুন: বিশ্রী ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই আপনার এত কৌশল: ফের তীব্র আক্রমণে ধনখড়
কেন্দ্রীয় দল যে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে, তা স্বীকার করেছেন মুখ্যসচিব। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা আজকেও দু’টি চিঠি দিয়েছেন। হাওড়া যেতে চেয়েছেন। গিয়েছেন। আমাদের লুকনোর কোনও কিছু নেই। কেন্দ্রীয় দল অডিট করতে আসেনি। আমরাও পরীক্ষা দিচ্ছি না যে, পাশ-ফেল থাকবে। আমরা আাশা করব তাঁরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।”
আরও পড়ুন: এই রমজানে ঘরে বসেই প্রার্থনা করুন: শুভেচ্ছাবার্তায় আবেদন মমতার
মুখ্যসচিব এ দিন জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪৩টি কোভিড টেস্ট হয়েছে এবং সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৯৩৩টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত রাজ্যে সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮৫ জন। যদিও গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া কেউ পাননি। এখনও পর্যন্ত রোগমুক্ত হয়েছেন ১০৩ জন। এ দিন মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, নতুন করে আক্রান্ত ৫১ জনের মধ্যে অর্ধেকের সামান্য বেশি কলকাতা থেকে। ১৮ শতাংশ হাওড়া থেকে, যা বৃহস্পতিবারের থেকে বেশি। ১৩ শতাংশ উত্তর ২৪ পরগনা থেকে। অর্থাৎ ৮২ শতাংশ আক্রান্তই কলকাতা-হাওড়া-উত্তর ২৪ পরগনার।
অন্য দিকে, বিজেপির তরফে রাজ্যের এই মৃত্যু-হিসেবকে কটাক্ষ করা হয়েছে। বিজেপি আইটি সেলের সর্বভারতীয় প্রধান অমিত মালবীয় টুইটও করেছেন বিষয়টি নিয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘‘ডেথ অডিট কমিটি নিয়ে বাংলার মুখ্যসচিবকে আইএমসিটি প্রধান চিঠি পাঠিয়েছেন। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই, মুখ্যসচিব চাপের মুখে স্বীকার করেছেন, রাজ্যে করোনা-মৃত্যুর মোট সংখ্যা ৫৭, আজকের মেডিক্যাল বুলেটিনে লেখা ১৮ নয়। ৩৯ জনের মৃত্যুর কারণ অন্য। পর্দা উঠছে।’’