Coronavirus in West Bengal

মৃত্যু, সংক্রমণ দুই ঊর্ধ্বমুখী, বাড়ছে দুর্ভাবনা

স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান, ১৪ মে থেকে এ-পর্যন্ত দৈনিক আক্রান্তের তালিকার শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২১ ০৫:২৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা এখনও পর্যন্ত সে ভাবে কমার লক্ষণ নেই বঙ্গে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৯,০৯১ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৬২ জনের। দু’টিই আগের দিনের থেকে বেশি। এই অবস্থায় চিন্তিত বহু চিকিৎসকও।

চিন্তা বাড়ছে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, নদিয়া নিয়ে। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান, ১৪ মে থেকে এ-পর্যন্ত দৈনিক আক্রান্তের তালিকার শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। শেষ সাত দিনে সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ৪১০০ থেকে ৪২০০-র ঘরে ঘোরাফেরা করছে। বেশ কয়েক দিন ধরে মৃতের সংখ্যাতেও প্রথম ওই জেলা। কলকাতায় দৈনিক সংক্রমণ সামান্য কম। শেষ সাত দিনে এখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ৩৪০০ থেকে ৩৯০০-র ঘর পর্যন্ত ঘোরাফেরা করছে। সাত দিন ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় দৈনিক আক্রান্ত ১২০০-র ঘরে রয়েছে। হাওড়ায় এক দিন দৈনিক আক্রান্ত ৯০০-র ঘরে নামলেও বাকি ছ’দিনই সেটি ১২০০-র ঘরে রয়েছে। আর নদিয়ায় ৯০০ থেকে এক হাজারের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা।

Advertisement

বুধবার উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও জানিয়েছে, উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্য এবং বঙ্গে দৈনিক আক্রান্ত, মৃত্যুর হার, পজ়িটিভিটি রেট সবই ঊর্ধ্বমুখী।

হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল জানান, আরটিপিসিআর ও র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন মিলিয়ে দৈনিক পরীক্ষার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় তিন হাজার করা হয়েছে। তিনি বলেন, "পরীক্ষা করে আক্রান্তদের চিহ্নিত করার পরে তাঁদের সঙ্গে থাকা লোকজনকে পৃথক করতে সুবিধা হচ্ছে। ফলে অন্য কারও নতুন করে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ অনেক কমছে।" লিলুয়া, শিবপুর, বেলুড়, দাশনগর, কোনা, লিলুয়া, জগাছা, কদমতলা, ইছাপুর এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি। সাঁকরাইল ও ডোমজুড়েও সংক্রমণ উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।

এক শ্রেণির মানুষ করোনা বিধি উপেক্ষা করায় জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে বলে জানান উত্তর ২৪ পরগনার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক। স্বাস্থ্য সূত্রের খবর, ওই জেলার শহর এলাকায় বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ওই আধিকারিক বলেন, "সংক্রমণ একটু কমতে শুরু করেছে। লোকজনও ইদানীং নিয়ম মানছেন। আশা করছি, আগামী সাত দিনে সংক্রমণ আরও কিছুটা কমবে।" এক শ্রেণির মানুষের অনিয়মে নদিয়াতেও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে স্বাস্থ্য শিবিরের অভিমত।

করোনা মোকাবিলায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুর এলাকায়। পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম গ্রেফতার হওয়ার পরে কালবিলম্ব না-করে কোভিড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতায় বেশি সংক্রমণের কারণ, দু’টিই একেবারে লাগোয় জেলা এবং পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত মিশ্র। সেই জন্য ওই দু’টি জেলা সব সময়েই দৈনিক আক্রান্তের তালিকার একেবারে উপরে থাকছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। রাজপুর, সোনারপুর, বজবজ, মহেশতলা, মগরাহাট, ক্যানিং এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা
সর্বাধিক। করোনা পরিস্থিতির উপরে নজরদারির জন্য জেলায় ইন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ওই জেলায় ১০টি সেফ হোম রয়েছে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘আমরা সব রকম ভাবে করোনা মোকাবিলার চেষ্টা করছি। পরিস্থিতির উপরে নজর রেখে পর্যাপ্ত শয্যা, অক্সিজেন এবং অন্যান্য জিনিসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

পশ্চিম বর্ধমানের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আসানসোল পুরসভার ১, ৪, ৫, ১১, ১৪, ১৯, ২০, ৩৩, ৩৯, ৭৫, ৭৭, ৮১, ৮৪— এই ১৩টি ওয়ার্ড এবং দুর্গাপুর পুরসভার ১, ৪, ৫, ৭, ৮, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমণের হার বেশি, প্রায় ৪০ শতাংশ। ওই সব এলাকার জনঘনত্ব, সচেতনতায় খামতি, বাইরের লোকজনের আসা-যাওয়ার প্রবণতা জেলার অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি। সংক্রমিত এলাকাগুলিকে ‘রেড জ়োন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষায় কারও রিপোর্ট পজ়িটিভ এলেই চিকিৎসকের পরামর্শমতো দ্রুত আইসোলেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দিন পনেরোর মধ্যে পরিস্থিতি না-বদলালে ওই সব এলাকাকে ‘গণ্ডিবদ্ধ’ করার পরিকল্পনা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাজি বলেন, ‘‘কিছু এলাকার উপরে প্রশাসনের বাড়তি নজর রয়েছে। উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement