কলকাতার বড় পুজো কমিটিগুলি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ফাইল চিত্র।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের রক্তচক্ষুর মধ্যে মাস পেরোলেই উৎসবের মরসুম শুরু। গত বছরের মতো এ বছরের উৎসবও যে নিয়ন্ত্রণ বিধির গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে সেটা মোটামুটি স্পষ্ট। কিন্তু দিকে দিকে পুজো-প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলেও জমায়েত ঠেকাতে সরকার ঠিক কী পদ্ধতি স্থির করবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেক জেলা-কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে তেমন কোনও বার্তা পৌঁছয়নি।
রাজ্যে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিধির মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্র ইতিমধ্যে উৎসব মরসুমের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার বার্তা দিয়েছে একাধিক বার। তাদের স্পষ্ট বার্তা, জমায়েতের দরুন সংক্রমণ যাতে না-ছড়ায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যগুলিকে। পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের তরফে সরাসরি কেউ মুখ না-খুললেও সূত্রের দাবি, শীঘ্রই বিধি তথা ভিড় নিয়ন্ত্রণের কৌশল স্থির করা হবে। দরকারে গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের সঙ্গে কথা বলবে রাজ্য।
জেলার পাশাপাশি কলকাতাতেও বড় পুজো কমিটিগুলি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। কার পুজো কতটা চমক দেবে, তা নিয়ে বিজ্ঞাপনও দেখা যাচ্ছে দিকে দিকে। কিন্তু রাজ্য এখনও কোভিড সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা সাতশোর নীচে থাকলেও তা রোজই বাড়ছে-কমছে। বুধ, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার রাজ্যে সংক্রমণের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৭৯, ৬৯৫ এবং ৬৮৬। ওই তিন দিনে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১০৬, ১২২ এবং ১১০। কাছাকাছি রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা যথাক্রমে ১১৬, ১০২ এবং ১০৯। ওই সব এলাকায় পুজোর বহর এবং জৌলুস চোখে পড়ার মতো। বরং অন্য জেলাগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা কম।
বিশেষজ্ঞ মহলের বক্তব্য, সকলের টিকাকরণ না-হলে উৎসব-জমায়েতে সমস্যা বাড়তে পারে। যাঁদের টিকা হয়নি, তাঁদের সংক্রমণের আশঙ্কা জোরদার হবে। তাই উৎসব পালনে নিয়ন্ত্রণ বিধির কঠোর প্রয়োগ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। গত বছর নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ির নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তার পরে রাজ্য সরকার ভিড় নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ করেছিল। কিন্তু এ বার কী হবে, তা স্পষ্ট নয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে। বস্তুত, তৃতীয় তরঙ্গ ঠেকানোর কৌশল স্থির করার ব্যাপারে গ্লোবাল অ্যাডভাইজ়রি বোর্ডের গত বৈঠকে জানানো হয়েছিল, উৎসবের সময়ের নিয়ন্ত্রণ বিধি স্থির করতে ফের আলোচনা করবে তারা।
রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘অ্যাডভাইজ়রি প্রকাশ করা হবে বলেই মনে হয়। শেষ দু’-তিন দিনে কোভিড কিন্তু অল্প হলেও বাড়ছে। তাই কেরলের ওনম থেকে শিক্ষা নিতে হবে। উৎসব-মরসুমের প্রস্তুতি হিসেবে মানুষ যদি হুল্লোড় শুরু করে, তা হলে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আবার কিন্তু ঘরে ঢুকে যেতে হবে। তাই গত বারের মতোই এ বারের উৎসবেও সংযত থাকতে হবে।’’