শুরু হল প্রবীণ নাগরিকদের কোভিড প্রতিষেধক দেওয়া। সোমবার আমরি হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ
প্রবীণদের কেউ কেউ সাত সকালে পৌঁছে গিয়েছিলেন হাসপাতালে। কেউ আবার হুইল চেয়ারে চেপে গিয়েছিলেন প্রতিষেধক নিতে। কিন্তু সোমবারেও পোর্টাল বিভ্রাটে কাউকে অপেক্ষা করতে হল দেড় ঘণ্টা, কেউ আবার প্রতিষেধক না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরলেন।
সোমবার থেকে শুরু হল ষাটোর্দ্ধ এবং কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সের নাগরিকদের প্রতিষেধক দেওয়ার প্রক্রিয়া। তার জন্যই এ দিন সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল কো-উইন-২ পোর্টাল। আর তাতে নাম নথিভুক্ত করেই হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন বয়স্ক মানুষেরা। কিন্তু, তাল কাটল পোর্টাল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এ দিন থেকে গোটা রাজ্যে কো-উইন-২ পোর্টাল চালু করা হয়েছে। তার মাধ্যমেই প্রবীণ, কো-মর্বিডিটিতে আক্রান্ত এবং স্বাস্থ্যকর্মী, প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা, ভোটকর্মীদের প্রতিষেধক পাওয়ার কথা। কিন্তু বেলা গড়াতেই শুরু হয়ে যায় পোর্টাল সমস্যা। স্বাস্থ্য মন্ত্রক টুইটে জানিয়েছে, কো-উইন পোর্টালে নাম তোলার কথা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কো-উইন অ্যাপ ডাউনলোড করে নাম নথিভুক্ত করতে গিয়ে বিভ্রান্তি বাড়িয়েছেন।
করোনা প্রতিষেধক দেওয়ার প্রক্রিয়া চালুর প্রথম থেকেই এই পোর্টাল বিভ্রাটের কারণে মাঝেমধ্যেই দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি। এ দিন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পোর্টালের সমস্যার জন্য অনেক জায়গাতেই প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য প্রবীণদের ভিড় উপচে পড়লেও অনেককে তা দেওয়া যায়নি। পোর্টাল সমস্যাটা একটু মিটলে প্রবীণদের প্রতিষেধক নেওয়ার বিষয়ে জোর দেওয়া হবে। কারণ তাঁরা এসে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করবেন, দাঁড়িয়ে থাকবেন, সেটা ঠিক নয়।’’
এ দিন রাজ্যে ১২৬টি কেন্দ্রে মোট ১৭ হাজার ৭৯ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। তার মধ্যে শহরে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ২৫টি কেন্দ্রে এবং জেলার সরকারি স্তরের হাসপাতালে প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। শুধুমাত্র হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনায় দুটি করে বেসরকারি হাসপাতালে প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল।
পূর্বভারতীয় বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি ও এক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তা রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘প্রবীণেরা উৎসাহের সঙ্গে প্রতিষেধক নিতে এসেছিলেন। আমাদের ঢাকুরিয়া ও মুকুন্দপুর আমরি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ১৫০ জন প্রবীণ প্রতিষেধক নিয়েছেন। আগামী দিনে সেই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হবে।’’
হাওড়াতে তেমন সমস্যা না হলেও, পোর্টাল বিভ্রাটে ভুগতে হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাকে। এ দিন সেখানে ১৪টি কেন্দ্র থেকে প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়ার কথা থাকলেও তিনটি কেন্দ্রে তা সম্ভব হয়নি। তার মধ্যে দুটি বেসরকারি হাসপাতালও রয়েছে।
এক বেসরকারি হাসপাতাল গোষ্ঠীর ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘আমাদের দমদমের হাসপাতালে প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়ার কথা থাকলেও এক জনকেও দেওয়া যায়নি। তবে দমদম-সহ হাওড়া ও সল্টলেক আইএলএস হাসপাতালে প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়ার অনুমোদন মিলেছে।’’ আবার বারাসত জেলা হাসপাতালে ভোট কর্মী এবং পুলিশ কর্মীদের টিকাকরণ হলেও প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়া হয়নি। সেখানকার সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “ভোটকর্মীদের প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে বলে চাপ খুব বেশি। তাই প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়া যায়নি। শীঘ্রই তা চালু হবে।”
রাজ্যে টিকাকরণের দায়িত্বে থাকা এক কর্তা তথা পরিবার কল্যাণ আধিকারিক অসীম দাস মালাকার জানিয়েছেন, ধীরে ধীরে রাজ্যের সর্বত্রই প্রবীণদের প্রতিষেধক দেওয়ার কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হবে।