পুরুলিয়া শহরের শ্মশানে সৎকারের কাজে রেড ভলান্টিয়ারেরা। নিজস্ব চিত্র।
এক জনের করোনার উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করানোর আগেই তাঁর বাড়িতে মৃত্যু হয়। অন্য জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। প্রথম জন বাঁকুড়ার হিড়বাঁধের, দ্বিতীয় জন পুরুলিয়ার পুঞ্চার বৃদ্ধ। দুই পরিবারের দাবি, মৃতের দেহ সৎকারে নিকটজনেরা এড়িয়ে গেলেও আত্মীয়ের ভূমিকায় পাশে পেয়েছেন রেড ভলান্টিয়ারদের।
কয়েক দিন ধরে জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন হিড়বাঁধের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ। তাঁর ছেলে বলেন, ‘‘মানবাজারের এক ডাক্তারের কাছে বাবার চিকিৎসা চলছিল। তিনি করোনা পরীক্ষা করাতে বললেও হয়ে ওঠেনি। শনিবার রাত ১০টা নাগাদ বাড়িতে বাবা মারা যাওয়ার পরে পড়শিদের খবর দিই। কিন্তু করোনায় বাবা মারা গিয়েছেন ভেবে কেউ আসেননি। সারা রাত দেহ আগলে পড়েছিলাম।’’
এ দিন সকালে তাঁর জামাইবাবু এসে সমাজ-মাধ্যমে নম্বর পেয়ে বাঁকুড়ার রেড ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৎকারের আর্জি জানান। বিডিও (হিড়বাঁধ) আলমগীর হোসেন জানান, প্রশাসন পিপিই কিট ও সমাহিত করার জন্য মাটি কাটার যন্ত্রের ব্যবস্থা করে দেয়। কাছের জঙ্গলে দেহ সমাহিত করা হয়।
শ্বাসকষ্ট নিয়ে ছোট ছেলের মৃত্যুর ১১ দিন পরে, শনিবার রাতে করোনায় পুরুলিয়া মেডিক্যালে মারা যান পুঞ্চার সাতষট্টি বছরের এক বৃদ্ধ। তাঁর বড় ছেলে, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বলেন, ‘‘ভাইয়ের উপসর্গ থাকলেও করোনা ধরা পড়েনি। পুরুলিয়ার শ্মশানে দাহ করেছিলাম। বাবার করোনার মৃত্যুর পরে প্রশাসন স্থানীয় শ্মশানে দাহ করতে বলে। কিন্তু দেখলাম, নিকটজনেরা এড়িয়ে যাচ্ছেন। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। রবিবার সকালে রেড ভলান্টিয়ারদের সাহায্য নিয়ে পুরুলিয়ার শ্মশানে দাহ করি।’’ বিডিও (পুঞ্চা) অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘করোনা-বিধি মেনে গ্রামের শ্মশানে দাহ করতে অসুবিধা নেই। সচেতনতায় আরও জোর দেব।’’
বাঁকুড়া রেড ভলান্টিয়ার সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভা মালাকার, ধর্মেন্দ্র সিং, সুজয় পাল এবং পুরুলিয়ার রেড ভলান্টিয়ার জিতেন ওঝা, সুশান্ত মাহাতো, রাজা সরকার, শঙ্খশুভ্র দত্ত, অরুণাভ চট্টোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘এ সময় মানুষ একা হয়ে যাচ্ছেন। পাশে থাকাটা দরকার।’’