গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে রোজই বাড়ছে করোনায় মৃতের সংখ্যা। গত কয়েক দিন ধরে সেই বৃদ্ধির গ্রাফটা চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের ঘরে ঘোরাফেরা করছিল। বুধবার তা বড়স়ড় লাফ দিয়ে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে গেল। মঙ্গলবার মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৪। বুধবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। রাজ্যে এই নিয়ে করোনায় মৃত্যু হল ১ হাজার ৮৪৬ জনের।
মৃতের সংখ্যার পাশাপাশি এ দিন আক্রান্তের সংখ্যাতেও নতুন নজির তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৫২ জন। বুধবার এক লাফে তা হয়েছে ২ হাজার ৮১৬। আক্রান্তের সংখ্যায় এমন বৃদ্ধিও এর আগে দেখা যায়নি। এ নিয়ে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এখন ৮৩ হাজার ৮০০। যদিও গত কালকের থেকে এ দিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বেড়েছে।
প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। রাজ্য সরকারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ২৪ হাজার ৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে যা এখনও পর্যন্ত সর্বাধিক। করোনা সংক্রমণের হার এ দিন কিছুটা স্বস্তিদায়ক। গত কাল ওই হার ছিল ১২.৩৩ শতাংশ। এ দিন সংক্রমণের হার খানিকটা নেমে হয়েছে ১১.৭১ শতাংশ। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ১০ লক্ষ ৩ হাজার ২৭টি।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আরও পড়ুন: দেশে মোট আক্রান্ত ১৯ লক্ষ ছাড়াল, ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ প্রায় ৫২ হাজার
প্রতি দিনই করোনায় আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়ছে। তবে পরিস্থিতির মধ্যেও কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে সুস্থতার হার। প্রায় ৮৪ হাজার করোনা রোগীর মধ্যে ইতিমধ্যেই ৫৮ হাজার ৯৬২ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। এখনও চিকিৎসা চলছে ২২ হাজার ৯৯২ জনের। রাজ্যে সুস্থতার হার এখন ৭০.৩৬ শতাংশ।
প্রথম থেকেই কলকাতায় করোনা সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। বুধবার অবশ্য সেই গতি কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৫ জন। কিন্তু এ দিন রাজ্যে মৃত ৬১ জনের মধ্যে শুধু মাত্র কলকাতাতেই মারা গিয়েছেন ২৫ জন। এই নিয়ে শহরে মোট মৃতের সংখ্যা এখন বেড়ে হল ৮৬০।
আরও পড়ুন: যেন শ্রাবণের সরযূ, রামভূমে ফিরে হিন্দুত্বে অর্গলহীন মোদী
কলকাতার তুলনায় এ দিন উত্তর ২৪ পরগনায় নতুন করে সংক্রমিতের সংখ্যাটা খানিকটা বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ওই জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১৩১। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। হাওড়ায় এ দিন আক্রান্ত হয়েছেন ২৯৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। হুগলিতে এ দিন আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৬। মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। এ ছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুরে ১১২, পশ্চিম বর্ধমানে ৯০ ও পূর্ব বর্ধমানে ৭০ জন নতুন করে আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় নদিয়ায় ৬৩, মুর্শিদাবাদে ৩৯ ও বাঁকুড়ায় ২৭ জনের নুতন করে করোনা ধরা পড়েছে।
উত্তরবঙ্গে মালদহে ১৪৪, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০২, দার্জিলিঙে ৫৯, কোচবিহারে ৪৪, আলিপুরদুয়ারে ৪২ ও জলপাইগুড়িতে ৩৭ জন নতুন করে সংক্রমিত। গতকালকের মতো এ দিনও দার্জিলিঙে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)