লাঠি হাতে ভাঙড়ের বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়। রবিবার। ছবি: সামসুল হুদা
রবিবাসরীয় দুপুর। শহর মেদিনীপুরের বটতলাচকে সাইকেল আরোহী যুবকের মাস্ক ঝুলছিল থুতনিতে। পথ আটকে পুলিশ কর্মী প্রশ্ন করতেই জবাব, ‘‘গরম লাগছে। তাই একটু নামিয়েছি।’’ পুলিশের ধমকে অবশ্য তড়িঘড়ি মাস্ক উঠল মুখে।
পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর থানার সামনে দিয়ে মাস্ক ছাড়াই দিব্যি যাচ্ছিলেন ভাগবত কর্মকার। আনাই-জামবাদ থেকে বিয়েবাড়ি উপলক্ষে আসা ওই যুবকের দাবি, মাস্ক পকেটে থাকলেও পরতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাঁকে আটক করে পুলিশ।
শুধু ধমক বা সচেতন করাই নয়, বেপরোয়া মানুষজনকে মাস্ক পরাতে ধরপাকড়ও শুরু করেছে পুলিশ। যাঁদের কাছে মাস্ক নেই, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে। তবে এখনও বহু মানুষ গা করছেন না। হাটে-বাজারে ঠেলাঠেলি হচ্ছে। মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করে শনিবারই নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য। বিধিভঙ্গ হলে দুর্যোগ মোকাবিলা আইনে ব্যবস্থা নিতে জেলাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার পরেও রবিবার উত্তর ২৪ পরগনা জুড়েই পুলিশকে পথে নেমে ধরপাকড় করতে তেমন দেখা যায়নি। তবে হাবড়া, বসিরহাট শহরে পুলিশ মানুষকে মাস্ক পরতে আবেদন করেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবশ্য পুলিশ-প্রশাসনের কড়াকড়ি ছিল। মাস্কহীনদের রোদে দাঁড় করিয়ে রাখা, কান ধরে ওঠবস, লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়ার মতো নানা পদক্ষেপ হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে কয়েকজনকে। তবে সে ভাবে জরিমানা নেওয়া শুরু হয়নি কোথাও। নদিয়ার কৃষ্ণনগর সদরের মহকুমাশাসক তথা পুর-প্রশাসক মণ্ডলীর সভাপতি চিত্রদ্বীপ সেন বলেন, ‘‘মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে প্রচার করছি। আজকের পর কেউ তা না মানলে ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।’’
কিছু জেলায় কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে শিলিগুড়িতে বিধিভঙ্গের অভিযোগে শতাধিক গ্রেফতার হয়েছে। কোচবিহার জেলাতেও গ্রেফতারের সংখ্যা শতাধিক। শনিবার রাতেই আলিপুরদুয়ার শহর থেকে ২৫জনকে গ্রেফতার করা হয়। জলপাইগুড়িতে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে পুলিশের টহল শুরু হয়েছে।
ধরপাকড় চলেছে হাওড়া, হুগলি ও পুরুলিয়ায়। উদয়নারায়ণপুর থানা পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মাস্ক না পরায় মামলা করেছে। হাওড়া গ্রামীণের জেলা পুলিশ সুপার শ্রীহরি পাণ্ডে বলেন,‘‘জেলা জুড়েই অভিযান হচ্ছে।’’ রবিবার বিকেল পর্যন্ত হুগলির মগরা থানা এলাকায় ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চন্দননগরের কমিশনারেটও প্রচারের পাশপাশি অভিযান চালাচ্ছে। মাস্ক না পরলে আটক করা হচ্ছে। পুরুলিয়ার মানবাজারে শনিবার সন্ধ্যায় মাস্ক না পরায় ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। জেলার পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাতো জানান, এ দিনও সারা জেলায় মাস্কহীন শতাধিক লোকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হয়েছে। দুই দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে অবশ্য তেমন কড়াকড়ি চোখে পড়েনি।
ছুটির দিনে দিঘা, মন্দারমণির সৈকত এলাকায় অধিকাংশের মুখে মাস্ক দেখা গিয়েছে। বীরভূমে শহরাঞ্চলে বাসিন্দাদের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও আশপাশের গাঁ-গঞ্জে ছবিটা বিপরীত। তিলপাড়া, কুখুডিহি, কাখুড়িয়া-সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলগুলিতে বেশিরভাগেরই মাস্ক নেই, মানা হচ্ছে না দূরত্ব বিধি। মানুষকে সচেতন করতে মাইকে প্রচার চলছে। পূর্ব বর্ধমানেও পুলিশের তরফে মাইকে প্রচার চলে। পশ্চিম বর্ধমানেও প্রচার-হুঁশিয়ারিতেই থমকে ছিল পদক্ষেপ। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের এক কর্তা জানান, আজ, সোমবার জেলায় ভোট। ভোট-পর্ব মিটলেই এ বিষয়ে আরও কড়া মনোভাব নেওয়া হবে।