গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ডিসেম্বর পড়ে গেলেও শীত সে ভাবে জাঁকিয়ে বসেনি এখনও। কিন্তু শীত বাড়লে কোভিড সংক্রমণ কী আকার ধারণ করবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই। তবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লক্ষ ছুঁইছুঁই। সুস্থতার হার খানিকটা হলেও আশা জোগাচ্ছে প্রশাসনকে। গত চার দিন ধরে লাগাতার দৈনিক আক্রান্তও কমছে রাজ্যে। একই সঙ্গে ২৯ অক্টোবরের পর থেকে দৈনিক মৃত্যু ষাটের ঘরে ঢোকেনি এক বারও।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গোটা রাজ্যে নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ৩ হাজার ১৭৫ জন। শুক্রবার নতুন সংক্রমিত হন ৩ হাজার ২০৬ জন। সেই তুলনায় নতুন করে সংক্রমণ সামান্য কমেছে। এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৯৯ হাজার ৬৯৭ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২৩ হাজার ৯৬৪।
গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যে দৈনিক মৃত্যু ষাটের ঘরে ঢোকেনি যদিও। তবে সংখ্যাটা ৪০ থেকে ৫০-এর ঘরেই ঘোরাফেরা করছে। শুক্রবার করোনার প্রকোপে রাজ্যে ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপে রাজ্যে ৮ হাজার ৬৭৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
আরও পড়ুন: করোনা টিকা আমদানি-রফতানির জন্য তৈরি হায়দরাবাদ, দিল্লি বিমানবন্দর
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)
অতিমারি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই রাজ্যে করোনা প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে। কলকাতা পুরপ্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম নিজে প্রতিষেধকের ডোজ নিয়ে দৃষ্টান্ত গড়েছেন। তাতে প্রতিষেধকের আশায় রাজ্যবাসী যেমন দিন গুনছেন, পাশাপাশি সুস্থতার হারও খানিকটা হলেও স্বস্তি জুগিয়েছে তাঁদের। মেট আক্রান্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৪ লক্ষ ৬৭ হাজার ৫৬ জন রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। শুক্রবার ৩ হাজার ২১৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ দিন তা সামান্য কমে ৩ হাজার ২০৭ হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে রাজ্যে সুস্থতার হার ৯৩.৪৭ শতাংশ।
প্রতি দিন যত সংখ্যক মানুষের কোভিড টেস্ট হয় এবং তার মধ্যে যত শতাংশের রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ হাজার ৩৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ৭.১৫ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ৬০ লক্ষ ৯১ হাজার ৬৬৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে এই মুহূর্তে কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনাই সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ১০ হাজার ৭৩৭ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনায় এখনও পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ১ লক্ষ ৪ হাজার ৪৫০ জন। কলকাতায় এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৬৬৫ জন। উত্তর ২৪ পরগনায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪২ জনের।
তবে গত ২৪ পরগনায় কলকাতাতেই সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেশি ছিল। এ দিন শহরে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৮৮ জন। প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। তবে পাশাপাশি ৮৫৭ জন সুস্থও হয়ে উঠেছেন। উত্তর ২৪ পরগনায় এ দিন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৭২৯ জন। করোনার প্রকোপে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮৩২ জন রোগী।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২৬১), হুগলি (১১৩), হাওড়া (১২৫), নদিয়া (১৪২), জলপাইগুড়ি (১০৬) এবং দার্জিলিঙেও (১৩৮) শতাধিক মানুষ নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এ দিন করোনার প্রকোপে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। হাওড়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪ জন। এ ছাড়াও হুগলি (১), পশ্চিম বর্ধমান (৩), পূর্ব বর্ধমান (১), পশ্চিম মেদিনীপুর (২), বাঁকুড়া (১), নদিয়া (২), মালদহ (১), উত্তর দিনাজপুর (১), জলপাইগুড়ি (২) এবং আলিপুরদুয়ারেও (১) করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন: জানুয়ারির মধ্যে দেশে জরুরি ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র পেতে পারে দু’টি করোনা টিকা, বললেন এইমস প্রধান
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)