সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গবার রাতেই ২১ দিনের ওই লকডাউনের কথা ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে মজবুত করতে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করেন তিনি। কিন্তু স্বাস্থ্যের বাইরেও বহু ক্ষেত্র রয়েছে। করোনা-সঙ্কটের এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের অবস্থা খতিয়ে দেখতে বুধবার নবান্নে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, কেন্দ্রের কাছে দেড় হাজার টাকার আর্থিক প্যাকেজ দাবি করছেন তিনি। সব রাজ্যকেই ওই প্যাকেজের আওতায় আনা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কয়েক দিন আগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির পাশে দাঁড়াক, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি জানানোর জন্য বিজেপি নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে সেই দাবিটা নিজেই তুললেন। বললেন, ‘‘করোনা-পরিস্থিতির মোকাবিলায় সব রাজ্যের জন্যই বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করুক কেন্দ্রীয় সরকার।’’ পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গকে কেন গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত তারও কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। এ রাজ্যের সঙ্গে যে হেতু গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও একাধিক প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রয়েছে তাই সেই প্যাকেজের অঙ্ক যাতে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বেশি হয় সেই আর্জিও জানিয়েছেন তিনি।
কেন রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ প্রয়োজন তার কারওণ ব্যাখ্যা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর মতে, ‘‘অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এর মধ্যেই দেশে করোনার মতো রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে হঠাৎ করে। এই রোগ ঠেকাতে রাজ্যগুলিকে একা একাই প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’’ এমন সঙ্কট কালে রাজ্যগুলির পাশে দাঁড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে এগিয়ে আসার আর্জি জানিয়েছেন তিনি। করোনার মতো অতিমারির মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার কেন আগে থেকে পদক্ষেপ করেনি, এ দিন এই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা।
আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে আটকে ২৭ বাঙালি, উদ্ধার পেতে কাতর আর্তি নবান্নের কাছে
রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য এ দিন একগুচ্ছ নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়েই পুলিশের বিরুদ্ধে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও আটকানোর অভিযোগ উঠছিল। এ দিন তা নিয়েও স্পষ্ট গাইডলাইন দিয়েছেন। মমতার নির্দেশ, ‘‘জরুরি পরিষেবা ও হোম ডেলিভারির মতো পরিষেবা কখনই আটকানো যাবে না। সব্জি ব্যবসায়ীদেরও আটকানো যাবে না। কৃষকদের কাজ করতে বাধা দেওয়া যাবে না।’’ তবে, জমায়েত যেন না হয় সে বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে ফের এক বার সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি। পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের আধিকারিকদের বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা মানে ‘মানুষকে আলাদা করে দেওয়া নয়’, এ দিন সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। অযথা আতঙ্কিত হয়ে জিনিসপত্র মজুত না করার জন্যও রাজ্যবাসীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: মায়াপুরে ইসকন মন্দিরে তালা, নজরে বিদেশ ঘুরে আসা ভক্তেরা
পাশাপাশি, মমতা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সব জ্বরই করোনা নয়। জ্বর হলেই সামাজিক ভাবে বয়কট করা যাবে না। কারও জ্বর হতেই পারে।’’প্রয়োজনে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জন সাধারণকে মানবিকতা দেখানোর আর্জিও জানিয়েছেন।