প্রতীকী ছবি।
ফের করোনা-আক্রান্ত কলকাতা পুলিশ। এ বার আক্রান্ত হলেন বন্দর এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি। ওই আধিকারিকের পারিবারিক সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। কলকাতা পুলিশও এ নিয়ে কিছু জানায়নি।
এর আগেও কলকাতা পুলিশের উত্তর ডিভিশনে কর্মরত এক পুলিশকর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে খোদ ওসি আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এই প্রথম। আর তার ফলে থানার কত জন পুলিশকর্মীকে অবিলম্বে কোয়রান্টিনে পাঠাতে হবে তা নিয়ে সংশয়ে স্বাস্থ্য দফতর এবং কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। কারণ আইসিএমআরের নির্দেশিকা অনুযায়ী থানার প্রায় সমস্ত কর্মীকেই কোয়রান্টিনে পাঠানোর কথা। সেই সঙ্গে দু’দিন ধরে গোটা থানা ভবন এবং চত্বর জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ফলে কী ভাবে থানার কাজ চলবে তা নিয়ে চিন্তায় পুলিশ কর্তারা।
গত বুধবার সকালে এমআর বাঙুর হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন ওই আধিকারিক। বৃহস্পতিবার তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ওই পুলিশ ইনস্পেক্টরের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর লালারসের নমুনার রিপোর্ট এসেছে শুক্রবার। সেই রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই আধিকারিককে এমআর বাঙুর থেকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হবে। সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতেই ওই ওসি-র দেহরক্ষী ও গাড়ির চালককে ডোমজুড়ের কোয়রান্টিন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তবে কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। বিভাগীয় ডিসি (বন্দর) ওয়াকার রাজাকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনও উত্তর দেননি।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে এগরাই মডেল, আরও বেশি কোয়রান্টিনে জোর মুখ্যমন্ত্রীর
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা ওই ওসি-র সংস্পর্শে আসা সমস্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে। সেই সঙ্গে খোঁজা হচ্ছে কী ভাবে তিনি আক্রান্ত হলেন? অর্থাৎ সংক্রমণের উৎস কী? আর তা থেকেই কয়েকটি তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে যা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: ভয় কিসের? বেলগাছিয়া বস্তিতে করোনা-যুদ্ধে বলছেন ওঁরা
ওই এলাকা থেকেই কয়েক দিন আগে পুলিশ এক ফুটপাতবাসীকে উদ্ধার করেছিল। বাংলা বাজারের টুকরা পট্টির ফুটপাথের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির করোনা-পরীক্ষার রিপোর্টও পরে পজিটিভ এসেছিল। সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি ছাড়াও, আরও কয়েক জন অসুস্থ ফুটপাতবাসীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। তাঁদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে বন্দর এলাকার একটি হাসপাতালের নার্সের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে।
সূ্ত্রের খবর, এই তথ্যগুলি স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। বুধবার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কয়েক দিন আগে পর্যন্ত থানায় ডিউটি করেছেন ওই আধিকারিক। ফলে থানার প্রায় সব পুলিশকর্মীই তাঁর সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন। তেমনি ওই এলাকারও অনেক মানুষ সংস্পর্শে এসেছেন। লকডাউনের সময়ে বিভিন্ন এলাকায় খাবার বিলি করছে পুলিশ। বন্দরের ওই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ। এ ধরনের জন সংযোগ থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, সাধারণত এলাকার মানুষের সঙ্গে ওসি-র থেকেও বেশি সক্রিয় থাকেন অন্য আধিকারিকরা। তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ না হয়ে ওসি-র হল কী ভাবে তা-ও ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, অন্য কেউ হয়তো ইতিমধ্যেই আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। ফলে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের পরামর্শ, সকলকেই আইসোলেশনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা এবং টেস্ট করানো।
পুলিশের পাশাপাশি, এ বার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের অতিরিক্ত অধিকর্তা পদমর্যাদার এক আধিকারিক শুক্রবার সকালে প্রবল জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। সকালেই তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। বেহালার বাসিন্দা ওই আধিকারিক গত চার দিন ধরে অসুস্থ। তিনি এক বেসরকারি চিকিৎসকের কাছেও গিয়েছিলেন। তাঁকে পরীক্ষা করার পর করোনা-চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেন ওই চিকিৎসক। এর পর স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরই তাঁর পরিবার এবং ওই বেসরকারি চিকিৎসককে কোয়রান্টিনে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ দিনই করোনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে মুর্শিদাবাদারে সালারের বাসিন্দা এক বৃদ্ধেরও। তিনি ক্যানসারের রোগী। কিছু দিন আগেই কলকাতা থেকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফেরেন। গত কয়েক দিনে তাঁর শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে ফের তাঁর পরিবার তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হলে সেই রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)